শূন্য চোখের স্বপ্ন

তনিমা রব তোড়া :

আজকের যুগে শিশুদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যপক আয়োজনে মিছিল মিটিং হলেও প্রকৃতপক্ষে শিশুদের পাশে দাড়ানোর মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ এ প্রবাদ বাক্যটি বর্তমান সময়ে প্রত্যেক মিছিল, মিটিং এর মূল কথা। তবে তা মুখের কথাই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ, প্রচার বা প্রসার কোনটিরই দেখা মেলে না। বর্তমানে তার ভিন্ন চিত্র যা প্রতিটি জেলা শহরের সাধারণ দৃশ্যের একটি। প্রতিবছর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। তবে আমাদের সমাজে শিশু শ্রম বন্ধ হয় না কখনোই। বরং তা পর্যায়ক্রমিক ভাবে বেড়েই চলেছে। সেই সাথে অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

বিভিন্ন কলকারখানা এবং গার্মেন্টসগুলোতে নামেমাত্র শিশু শ্রমবিরোধী সাইনবোর্ড দেখা গেলেও, তারাই অধিক লাভের আশায় শিশুদের এসব কাজে ব্যবহার করে। সমাজের উচ্চপদস্ত ব্যক্তিটি মিছিল, মিটিং এ শিশু শ্রমবিরোধী বক্তৃতার পর রাস্তায় পথশিশুকে দেখেন না। নিজের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়োজিত শিশুটির উপর অমানবিক নির্যাতন করেন দিনের পর দিন। বর্তমানে পুজি ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তি ব্যবসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানেও দেখা যায় শিশু শ্রমিকদের ঢল। অনেক শিশুদের লেখাপড়া করার ইচ্ছে থাকা সত্তেও পরিবারের চাপে নয়তো পরিবারহীন হওয়ায় মেনে নিতে হয় এই ভিক্ষাবৃত্তি নামক ব্যবসা। এসব শিশুর অসহায় চোখের দিকে তাকিয়েও কারও বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয় না। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা। যে দেশ লাখো মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছে আজ এত বছর কোথায় সেই স্বাধীন দেশ। যে দেশে ছোট ছোট শিশুরা নিজেদের অধিকার পায় না, জীবীকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি আরো কঠোর শ্রমকে মেনে নিচ্ছে সে দেশ কিভাবে উন্নতির শেখরে পৌঁছবে। যেখানে সরকার সুষ্ঠুভাবে এর কোন প্রতিকার করতে পারছে না সেখানে সাধারন মানুষের সামান্য সহায়তায় কিছুই সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে। পথশিশু আর শ্রমজীবী শিশুরা এভাবেই অনাদরে অবহেলায় পড়ে রবে। আর এভাবেই উপরমহলের বক্তব্যগুলো পুরোনো হতে থাকবে সেই সাথে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষাহীনতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেবে। আমাদের দেশে সফলভাবে শিশুদের জন্য কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অবহেলিত শিশুরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে অনৈতিক কার্যকলাপে। নির্যাতনে জর্জরিত করা হচ্ছে একের পর এক শিশুকে। এরকম শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনার পর দেশময় তোলপাড় হয়ে যায় ঠিকই কিন্তুু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কারও ভূমিকা বিশেষ লক্ষ্যনীয় নয়। তাহলে নিজের দেশে শিশুর নিরাপত্তা কোথায় ?

শিশুরা সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে বড় হবে তেবেই তো তারা দেশ নেতৃত্ব দেবে। যেখানে তাদের বেঁচে থাকাই প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করা নেহায়েত কল্পনাতীত। দেশের বর্তমান পরিস্থতি বিবেচনায় সরকার সহ সকলের সজাগ দৃষ্টিই এসকল শিশুদের শূণ্য চোখে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফোটাতে পারে । আর তা না হলে স্বপ্নগুলো শূন্য চোখেই রয়ে যাবে.