নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ

অধিকার কি?

অধিকার হলো ন্যায্য পাওনা। যার আইনগত, সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি আছে। যা চাওয়ার দরকার নেই এমনিতেই পাওয়া উচিত। যা না পেলে একজন মানুষের বেঁচে থাকা অনিশ্চিত বা কষ্টকর হয়ে যায়, বিকাশ ও নিরাপওা বাধাগ্রস্থ হয়।

শিশু অধিকার কি?

শিশু অধিকার হলো শিশুদের ন্যায্য পাওনা। যার আইনগত ভিত্তি হচ্ছে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের শিশুনীতি। যা চাওয়ার দরকার নেই এমনিতেই পাওয়া উচিত। যা না পেলে একজন শিশু সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারবে না, শিশুর বিকাশ ও নিরাপত্তা বাধাগ্রস্থ হয়। 

শিশু কারা :

 জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নীচে সকল মানব সন্তানই শিশু। 

কিশোর-কিশোরী কারা :

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েই হচ্ছে কিশোর কিশোরী। 

নাগরিক অধিকার কি?

অন্যদের অধিকার অক্ষুন্ন রেখে রাষ্ট্রের বিধিবহির্ভূত পরিসরে বাধাহীন, নিরুপদ্রব ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সমাজের সকল ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকারসমূহ।
সাধারণত আইনি ঘোষণা বা সাংবিধানিক বিধিমতে প্রয়োজনে আইনের রক্ষকদের দ্বারা এসব অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়। সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারী রাষ্ট্র এবং এর বিভিন্ন এজেন্টদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এ অধিকারসমূহ সংরক্ষণ ও চর্চা করা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাগরিক অধিকারগুলো কি কি ?

বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারসমূহ ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিধিবদ্ধ রয়েছে এবং এসবের প্রয়োগ উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ অধিকারগুলোর কয়েকটি হচ্ছে –
– আইনের চোখে সবাই সমান।
– ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ অথবা জন্মস্থান নিয়ে কোন বৈষম্য সৃষ্টি না করা।
– রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে জনজীবনে নর নারীর সমানাধিকার।
– রাষ্ট্রের চাকুরিতে সমান সুযোগ।
– আইনের সংরক্ষণের অধিকার।
– ব্যক্তিজীবন ও স্বাধীনতার অধিকার।
– বেআইনি গ্রেফতার ও আটক রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
– বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা।
– চলাফেরার স্বাধীনতা।
– সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা।
– সংঘ-সমিতি করার স্বাধীনতা।
– চিন্তা, বিচারবুদ্ধি ও বাক্স্বাধীনতা।
– পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা।
– ধর্মের স্বাধীনতা।
– সম্পত্তির অধিকার।
– বাসস্থানের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের গোপনীয়তা।
অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেক নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। আবার অসৎ কিছু ব্যক্তির কারণেও অনেকে তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে না। তাই নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।

রাজনৈতিক অধিকার কি?

দেশের রাজনীতি ও শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি, রাজনৈতিক অধিকার একরকমের অধিকার যা সরকার, সামাজিক সংগঠন, ও বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারা লঙ্ঘনের থেকে একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করে। একজন যাতে বৈষম্য বা নিপীড়ন ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের বেসামরিক ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করে।

রাজনৈতিক অধিকারগুলো কি কি?

রাজনৈতিক অধিকারগুলোর কয়েকটি হচ্ছে –

– নাগরিকের নির্বাচিত হওয়ার অধিকার।
– সরকারের সমালোচনা করার অধিকার।
– রাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে বসবাসের অধিকার।
– সরকারি চাকরি লাভের অধিকার।
– ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার অধিকার।
– বিদেশে অবস্থানকালীন নিজ রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা লাভের অধিকার।
– ভোট দেওয়ার অধিকার।

শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ কি :

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এর অনুচ্ছেদ -৩
সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ শিশুদের বিষয়ে সকল কার্যক্রমে শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করবে।

শিশু সুরক্ষা কি :

একজন শিশুকে সকল রকম নির্যাতন, অবহেলা, শোষণ এবং সহিংসতা থেকে রক্ষা করা।

শিশুর অংশগ্রহণ

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এর অনুচ্ছেদ -৩১
প্রতিটি শিশুর অবকাশ যাপন, খেলাধুলা করা এবং শিল্প সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড

  • সমাবেশ করা
  • মানব বন্ধন
  • নির্বাচনের অংশগ্রহণ করা

রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড

  • সমাবেশ করা
  • মানব বন্ধন
  • নির্বাচনের অংশগ্রহণ করা
  • মিছিল করা
  • পোষ্টারিং করা
  • নির্বাচনী প্রচারণা করা
  • হরতাল করা
  • পিকেটিং করা

রাজনৈতিক দলেন কর্মকান্ড ও শিশুদের উপর এর প্রভাব এবং শিশু সুরক্ষা কিভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে :

রাজনীতিতে শিশুদের অংশগ্রহন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ঘটনা নয়। ঐতিহাসিকভাবে আমরা রাজনীতিতে শিশুদের অংশগ্রহন দেখতে পাই। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে সেটা হল সহিংস রাজনীতিতে অংশগ্রহনকারী শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাসমান নানা পেশায় নিযুক্ত শিশু যারা রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। শুধু ঢাকা শহরে কি পরিমাণ পথশিশু রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। হরতাল, মিছিল, পিকেটিং, ইত্যাদি সময়ে শিশু যখন সরকারি বা বিরোধী দলের ব্যানারে অংশগ্রহন করে তখন তা শিশুদের জন্য অনেক ভয়ানক বিষয় হয়ে দাড়াতে পারে। কারন দেখা যায় যে, মিটিং মিছিলগুলোতে পুলিশ নিরাপত্তার কারণে আন্দোলন প্রতিহত করতে অথবা একই সাথে প্রতিপক্ষও নানাভাবে হামলা করে। এছাড়া শিশু বয়সে এরকম সহিংস রাজনীতিতে অংশগ্রহন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে বড় বাধা। যার ফলে ভবিষ্যতে তারা ভয়ানক সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে পারে অথবা রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে যেতে পারে।

কখন কখন রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুর অংশগ্রহনের ঘটনা ঘটে থাকে -

  • সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়
  • দলীয় কর্মীরা (বড়রা) যখন রাজপথে নামতে (বা সামনে থাকতে) ভয় পায় তখন
  • শিশু যখন আর্থিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে থাকে
  • শিশু যখন নিজ পরিবারে সমস্যার মধ্যে থাকে
  • অধিক ও তাৎক্ষনিক টাকার প্রলোভন
  • বন্ধুদের প্ররোচনা
  • অন্যান্যদের দেখে দেখে
  • ক্ষমতার লোভে
  • বস্তিতে প্রভাব বিস্তার করার জন্য

কেন ইয়ুথ:

রাজনৈতিকভাবে নিজেকে সচেতন করতে এবং শিশুদের সচেতন করতে অগ্রণীভূমিকা রাখবে । নিজেকে সচেতন করার জন্য এবং কোন রকম ঝুকিপূর্ণ কাজের সাথে না জড়ানো এবং তাদের সহপাঠী, বন্ধু বান্ধবদেরও ঝুকিপূর্ণ রাজনৈতিক কাজের সাথে জড়ানো থেকে বিরত রাখবে। সেই সাথে তাদের এলাকায় নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে তাদের সমবয়সী এবং শিশুদের সচেতন করতে সচেষ্ট ভুমিকা রাখবে।