কিশোরগঞ্জ জেলা এনসিটিএফ এর এপ্রিল মাসের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

০৮-০৪-১৭ ইং রোজ শনিবার অনুষ্ঠিত হল এনসিটিএফ কিশোরগঞ্জ এর এপ্রিল মাসের মাসিক সভা। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ এনসিটিএফ এর সভাপতি। সভার মূল বিষয় ছিল দরিদ্র শিশুদের মাঝে বৈশাখি বস্ত্র বিতরণ।  ১৩-০৪-১৭ ইং রোজ বৃহস্পতিবার বস্ত্র বিতরণ করা হবে। উক্ত সভায় এনসিটিএফ কিশোরগঞ্জের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রতনদের গল্প

সিরাজুল ইসলাম আসিফঃ শীতের সকাল মানে কুয়াশা ঢাকা সকাল। কিন্তু ব্যস্ত ঢাকার গমগমে পরিবেশে এই শীত যেন সকাল ৯টা বাজতে না বাজতেই মিলিয়ে যায়। ঢাকার আকাশ যেন ঢেকে গেছে বিশাল বিশাল অট্টালিকায়। এত শত অট্টালিকার ভিড়েও বহু বস্তি আছে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়। সেই বস্তিতে বসবাসরত মানুষগুলোকে আকাশ দেখার জন্য ঘর থেকে বের হতে হয় না। তারা তাদের খুপরি ঘরের পলিটিনের চালের ফুটো দিয়েও দেখতে পারে সুবিশাল আকাশটাকে। ঢাকার সেই অগনিত বস্তির মধ্যে একটিতে থাকে রতন। বয়স আর কত হবে ৮/৯। রতনের মা মারা গেছে ক্যান্সারে। মা মারা যাওয়ায় বাবা আরেকটা বিয়ে করে ফ্লাট বাড়িতে চলে গেছে রতন এবং রতনের বোনটাকে রেখে। রতনের বোনের নাম মুন্নি। মুন্নির বয়স ৫ বছর। সকাল হলেই মুন্নি এবং রতন বেরিয়ে পরে কাজে। মুন্নি পার্কে ফুল বিক্রি  করে। আর রতন পার্কে ঘুরে ঘুরে সিগারেট, চা-কফি বিক্রি  করে। এই কাজ করে ওরা দিনে ২ বেলা চাল ফুটিয়ে খেতে পারতো।
তাই করে চলতো ওদের। রতন একটা স্কুলে ক্লাস ২ পর্যন্ত পরেছিলো। রতনের ইচ্ছা ছিলো সে অনেক বড় হবে। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হবে। ওরা যখন কাজ করতে পার্কে পার্কে ঘুরে বেড়ায় তখন মাঝে মাঝে পুলিশের দৌড়ানি খেতে হয় ওদের। তাই ও বলে,’আমি যদি পুলিশ হইতে পারি তাইলে আমাগো মতো ছোড ছোড পুলাপাইন যারা রাস্তায় ঘুইরা ঘুইরা কাম করে ওগোরে মারুম না’।
এমনি একদিন রতন আর মুন্নি পেটের তাগিদে গিয়েছিলো পার্কে। সারাদিনের কাজ শেষ করে তাদের সেই বস্তির ঘরটি তে ফিরে দেখে ঘরটি আর নেই। স্থানীর প্রভাবশালী এক ব্যাক্তির লোকেরা সব বস্তি উচ্ছেদ করে দিয়ে গেছে। রতনদের সেই থাকার জায়গায় নাকি মার্কেট হবে। বিশাল মাল্টি কমপ্লেক্স ভবন হবে। রতনদের থাকার মতো এখন কোনো জায়গা নেই, ভাত রান্না এবং চা জ্বাল দেয়ার হাড়িটাও ভেঙ্গে দিয়ে গেছে ওরা।
রতন আর মুন্নি এখন থাকছে ফুটপাতে। তীব্র শীতের মধ্য রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা কুকুরগুলো পাশেই শুয়ে থাকতে হয় ওদের। ঢাকা শহরে খড় কুটা নেই, থাকলে ভালো হতো। অন্তত সেই খড়কুটার উপরও শুয়ে থাকতে পারতো। রতন মাঝে মাঝে ভাবে,’ এই শহরটা যেমন ইট পাথরে ভরে যাচ্ছে তেমনিভাবে এই শহরের মানুষগুলো হয়তো ইট পাথরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।’ প্রতিদিন রাতেই টহল পুলিশের দৌড়ানি খেয়ে এক ফুটপাত ছেড়ে অন্য ফুটপাতে সরে যেতে হয়।
রতন এবং মুন্নির খাবার সংগ্রহের এখন একমাত্র জায়গা ডাস্টবিন গুলো।  ঢাকায় ডাস্টবিনগুলো থাকাতে ভালোই হলো, অন্তত এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে টাকা ছাড়াই খাবার খাওয়া যায়।