আমার স্কুল জীবন

 

জীবনের  একটা   অধ্যায়ের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি । তারপরও নিজেকে প্রশ্ন করি কোথায় পৌঁছেছি আমি! কি আমার পরিচয় ? সে কারনেই কিছুটা স্মৃতি চারণ

মীরপুরের “লিটল ফ্লাওয়ার”নামক প্রতিষ্ঠানে ১/২ কেজি শ্রেনীতে ভর্তির মাধ্যমে আমার স্কুল জীবনের শুভ সুচনা ঘটে । এই স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত আমার ঠাই হয় । বাবার সরকারী চাকরী, হটাৎ একদিন সন্ধ্যে বেলা জানতে পারলাম খুব শীঘ্রই আমরা ঢাকা ত্যাগ করে রাজশাহী চলে যাব । তখনো বন্ধু চিনতে শিখিনি। নতুন বাসস্থানে যাওয়ার আনন্দে ২দিন ঠিকমত ঘুম হলনা । আমার রাজশাহী জীবন ছমাস পার হয়ে গেলো। পড়াশোনা খেলাধুলা সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো শুধু উত্তরের আবহাওয়া ছিল মারাত্মক বৈরি । থাকা হলোনা রাজশাহী এবার রওনা হলাম খুলনার দিকে।  ছমাস কিভাবে কেটে গেলো টের পেলাম না, সামনে তৃতীয় শ্রেণীর বিশাল  এক ভর্তি পরীক্ষা ! যেকরেই হোক ভাল স্কুলে ভর্তি হতেই হবে।

প্রথম পরীক্ষা “খুলনা পাবলিক কলেজ ” এর । প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম এই স্কুলের , পরিক্ষার আগের রাতে স্বপ্নও দেখে ফেললাম এবং আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে ভরতিও হয়ে গেলাম এখানেই । স্কুল জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যায়ের শুরু মূলত এখানেই, এখন আমি বন্ধু চিনতে শিখেছি , চিনতে শিখেছি নিজের পরিচয় । পাবলিক কলেজের কত আনন্দ কত ভালবাসা বন্ধুত্তের সম্পর্ক সব বুকে চেপে রেখে দুফটা চোখের জল সঙ্গী করে আবার রওনা হই ঢাকায়। “শেরে বাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়” হয় আমার নতুন পরিচয় । সামান্য দিনের পরিচয়ে , নতুন পরিবেশে  কিছু নতুন স্বপ্ন ,কিছু নতুন বন্ধু সব আবার মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছিল । থাকা হলনা ঢাকায় আবার প্রত্যাবর্তন চিরচেনা খুলনায়, কিন্তু এবার আর আমি ভেঙ্গে পড়িনি । পরিবেশ পাল্টাতে পাল্টাতে মনটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছিলো, নতুন পরিবেশ আমাকে একটুও ভীত করতে পারেনি। পুরনো বন্ধুদের ফিরে পেলাম কিন্তু ফিরে পেলাম না প্রিয় প্রতিষ্ঠান। “খুলনা পাবলিক কলেজের” শ্রধ্যিও প্রিন্সিপাল মহোদয় আমাকে ভরতি নিতে অস্বীকার জানালেন । বাধ্য হয়ে আমাকে “খুলনা জিলা স্কুল” ভর্তি হতে হল। পরগাছার মতো হাজির হলাম জিলা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের মাঝে । হয়তো এটিই আমার শেষ স্কুল। জেলা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের মাঝ থেকে আমিও ২০১৬ সালের এস,এস,সি  পরীক্ষার্থী।

কিন্তু খারাপ লাগার চেয়ে আনন্দের বিষয় এপর্যন্ত যেকটি পরিবেশে  আমি মিশেছি, আমি মিশেই আছি । সবাই আমার বন্ধু । সুখে দুঃখে যাকেই কাছে চেয়েছি তাকেই পেয়েছি । এই অপদার্থকে কেউ পর করে দেয়নি।  এক সময় খুব কষ্ট হত একটি স্কুলে পুরোটা স্কুল জীবন পার করতে না পারায়। কিন্তু এখন ভেবে গর্ব হয়আমি খুলনা পাবলিক কলেজের ছাত্র। আমি শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমি খুলনা জিলাস্কুলের ছাত্র।

আহনাফ রাহাত ইপ্তি

খুলনা