ট্যাকা হারাইছে

এ.টি.এম.ফয়সাল রাব্বি রাকিব:“ভাই,কয়টা বাজে?”-তার সময় জানা খুব জরুরী। দিনশেষে,তার রাতের খাবারের অর্থটুকু তাকে আয় করতে হবে। তাইতো, ছাত্রের মত সময়মানুবর্তীতার অনুশীলন করতে হয় তাকেও।
ব্যাস্ত নগরী। জীবীকার উদ্দেশ্যে বিরামহীন চলছে শহুরে কর্মকাণ্ড।সেখানকার কর্মকাণ্ড বেশিই ব্যস্ত আর অসস্তিকর বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। নানান অভিজ্ঞতার মধ্যে কিছু অভিজ্ঞতা বেশ তিক্ততার,কিছু করুন ছিল আমার কাছে।
গত মাসে গিয়েছিলাম ঢাকায়। উদ্দেশ্য ছিল অপারেশন, ঘোরা। জীবীকার তাগিদে যে কতজন কত বিচিত্র পেশা গ্রহন করতে পারে তার বৈচিত্রতা ঢাকায় না গেলে দেখা হত না। সবচেয়ে বৈচিত্রময় পেশা মনে হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি।  ভিক্ষা করার ধরন, কৌশল উল্লেখকরার মত। ভিক্ষাবৃত্তিকে ব্যবসা বলা যেতে পারে। বিনা ইনভেস্টমেন্ট এ মুনাফা পুরাটাই।
ফার্মগেট, সেজান পয়েন্টের কাছে ফ্লাইওভারটা পার হচ্ছি। এক পিচ্চি পংগু বাচ্চা ক্ষপ করে ধরে ফেলল পা। কিছুতেই ছাড়বেনা,টাকা না দিলে। বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে করুনা হচ্ছিল, করুনা হওয়াও স্বাভাবিক। করুনার সাথে তীক্তও হচ্ছিলাম। অবাকও হচ্ছিলাম, এতোটুকু শিশু কি করে এমন কৌশলী ভিক্ষুক হয়ে উঠল? ভিক্ষাবৃত্তিকে দোষ দিচ্ছি না,কারন কোনো পথ না পেয়েই তারা ভিক্ষাবৃত্তি করছে, কিন্তু দোষ দিচ্ছি তাদের টাকা আদায়ের কৌশলটাকে,দেখে মনে হয় তারা ভিক্ষা করায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানকার সবাই বিভিন্নভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী, দেখেই বোঝা যায় প্রতিবন্ধকতা জন্মগত নয়। এক্ষেত্রে, একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, তারা কি আসলেই ভিক্ষা করছে?  নাকি তাদের দ্বারা ভিক্ষা করানো হচ্ছে……?
সাভারের, জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সেখানেও একই অভিজ্ঞতার স্বীকার হতে হল। টাকা না দিলে কিছুতেই পিছু ছাড়বে না একদল শিশু। এক্ষেত্রে পূর্বেকার উত্তোলিত প্রশ্নটি আবার জেগে ওঠে তারা কি ভিক্ষা করছে? নাকি করানো হচ্ছে…?

এসব অভিজ্ঞতা ছিল তীক্ততার অভিজ্ঞতা, মনে ততটা নাড়া দেয় না।
যে অভিজ্ঞতায়, আজও আমি মর্মাহত, সেটা বলছি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মীর মোশারফ হলের সামন দিয়ে যাচ্ছি। ছোট এক বাচ্চা ছেলে আমায় জিজ্ঞেস করল ভাই কয়টা বাজে? তার দিকে ততটা মনোযোগ না দিয়ে বললাম, সাড়ে বারটা। বাচ্চাটার বয়স ৫-৬ বছরের বেশি না, আমার ভাগনীর বয়সী।  পড়নে হাফপ্যান্ট, ময়লা গেঞ্জি। হাতে চায়ের ফ্ল্যাক্স। সে একজন চা বিক্রেতা। আমার ভাগনীর আজ সকল মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি সকল আবদার পূরন হচ্ছে, আর সে বাচ্চাটা গরীবঘরে জন্মেছে বলে ২ বেলা খাবার খাওয়ার জন্য আয় করতে হয়। একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এই যে, কেউ গরীব ঘরে, আবার কেউ ধনী ঘরে জন্মায় সেটা খুব গোজামিল সিস্টেম মনে হয় আমার কাছে। শুধুমাত্র জন্মের পরিবারের ভিন্নতার কারনে কারোও বাবা-মা অপেক্ষা করেন, কখন তার সন্তান আবদার করবে, আর কখন সে মুখ ফুটে হাসবে। আর কারো বাবা-মা অপেক্ষা করেন কখন তার সন্তান চা বিক্রি শেশে রোজগারের টাকা এনে দেবে। সবই জন্মের দোষ।  জন্ম? সেও তো বিধাতার হাতে।
বাচ্চাটা চলে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মনে হল, বাচ্চাটি কাঁদছিল। পিছন ফিরে বাচ্চাটি থামালাম। জিজ্ঞেস করলাম কান্নার কারন। কেঁদে বলল,”ভাই, ট্যাকা হারাইছে”। বলে সে আবার দ্রুত হাটা শুরু করল, দিনশেষে যে তাকে খাবারের টাকা জোগাতেই হবে। নইলে, অভূক্ত থাকতে হবে সারারাত। ক্ষুধা? সেও তো বিধাতা প্রদত্ত। কেউ পেট ভরে খেতে চায় বাচার জন্য, কেউবা ভরা পেটে যায় দামি রেস্টুরেন্ট এ আদিক্ষেতা করতে। চা বিক্রেতা বাচ্চাটাকে আবার থামিয়ে ২০ টাকা হাতে দিলাম,দেওয়ার জন্য এটাই সম্বল ছিল আমার।  হয়ত ২০টাকায় সে একবেলা খেতে পারবে। আমি চকচকে প্যান্ট -শার্ট পড়ে হাটছি, ঘুরছি, বিনোদন করছি,বাপের টাকায় আদিক্ষেতার সব কিছুই করছি, আর আমারই এলাকায়, আমারই সমাজে, আমারই দেশে একটা অর্ধ উলঙ্গ শিশু ২ বেলা খেয়ে বেচে থাকার জন্য চা বিক্রেতার কাজ করে। সেই মুহুর্তটুকু নিজেকে বড় ধরনের অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমি জানি, এসব শিশুদের শিক্ষা ও অধিকারের জন্য সরকারি নানা ধরনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। আমরা এনসিটিএফও শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। তারপরও, একটা চিরন্তন প্রশ্ন থেকেই যায়, আর কতদিন এরকম শিশুকে দেখতে হবে?

কন্যা শিশুকে অবহেলা নয়

মুসাব্বির হোসেন : কন্যা একটি জাতির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী। কন্যা বা মেয়ে ছাড়া কোন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তার উদাহরন বলা বাহুল্য। সরকারের পাশাপাশি কন্যা শিশুর পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা বাবা-মার দায়িত্ব। প্রতি বছর সেক্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখে কন্যা শিশু দিবসের কথা মনে করে দেয়। এখনো বাস্তবতায় দেখা যায় আমাদের পারিবারিক গন্ডিতেই। আমাদের পরিবারে প্রায় এখনো কন্যা শিশুর থেকে ছেলের দিকে নজরটা অন্য রকমই রয়েছে ।

আর কন্যা পায় না তার সঠিক অধিকার যা তার প্রাপ্য। এর মূল কারণটা কি এ যুগ খারাপ না কি অন্যকিছু? কিন্তু কন্যা কে যদি তার সুযোগই না দেওয়া হয় তাহলে তার প্রতিভাই বলি বা প্রাপ্য বলি সে পাবে কিভাবে ? আর জাতি কিভাবেই বা মাথা উঁচুকরে পৃথিবীর বুকে দারাবে। মেয়েদের যদি সেই সুযোগটা পরিবার থেকে পুরোপুরি ভাবে পায় তারাও দেখিয়ে দেবে সফলতা। কন্যা শিশু আমাদের উন্নয়নশীল দেশে মধ্যবৃত্ত আর নিম্নবৃত্তের পরিবারেই বেশি। সেখানে কন্যা শিশু নিজ পরিবার থেকেই বঞ্চিত হতে হতে বড় হয় তবে সে সমাজ ও পরিবারে মাথা উঁচুকরে দাড়াবে কিভাবে ? আবার শুধু বাবা-মা বা পরিবারের দোষ দিলেই হয় না ।মনে করিয়ে দেয় বেগম রোকেয়ার কথা যে তার অধিকার না পাওয়ার সে ক্ষেত্রে কন্যারো অবহেলাও রয়েছে। কারণ নিজের অধিকার পাওয়ার জন্য তাকেও সচেতন হতে হবে। এছাড়া সবচেয়ে মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক ঘটনা হল ছোট্ট শিশু ধর্ষনের মত ঘটনা ।

তাই আগে নিজের পরিবারকে সচেতন হতে হবে । ছেলে মেয়ে বিভেদ নয় । সকলের জন্য চাই অধিকার এবং বাস্তবতা নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে জাতির সমাজ উন্নত এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ তা বাস্তবায়ন হবে এটাই স্বাভাবিক । এছাড়া মানুষের নৈতিক চরিত্র,মূল্যবোধের উন্নতি আবশ্যক ।

উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না শিশু শ্রমিকরা

 জাওয়াদুল করিম জীসান: সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ ১২ ঘন্টা পরিশ্রম করেও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না বগুড়ার প্রেস পট্টির শিশু প্রেস শ্রমিকরা।বড়দের মত একই পরিশ্রম অথবা কখনো অধিক পরিশ্রম করেও শিশু শ্রমিকরা পায় না সম পরিমান পারিশ্রামিক।

সরেজমিনে ঘুরে বেশ কিছু শিশু শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের শাপলা মার্কেট ও প্রেস পট্টির শিশু প্রেস শ্রমিক প্রায় দু’শো।এদের অধিকাংশের বয়স ১২-১৬ বছর।এরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সপ্তাহে মাত্র ৭০টাকা,মাসে ২৫০ টাকায় শ্রম দেয়।অথচ একই পরিশ্রম ও সময়দানকারী বড় শ্রমিকরা পায় এদের তুলনায় ৫-৭ গুন পারিশ্রমিক।ফলে উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে অমানবিক ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু শ্রমিকরা।

সুদূর গাইবান্ধা থেকে এসে কাজ করা শিশু শ্রমিক রনি(১২)জানায় তার সাপ্তাহিক বেতন ৭০ টাকা।এক কাগজের দোকানে কাজ করে সে।একই দোকানে একই কাজের বড় এক শ্রমিকের মাসিক বেতন ২,৫০০ টাকা।শুধুমাত্র ছোট বা শিশু হবার কারনে তাকে এত অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন মহাজন।অথচ তাকে কাজ করতে হয় তুলনামুলক বেশি।

শাপলা মার্কেটের  শিশু শ্রমিক মিলন(১১) জানায় প্রতিদিন সকালে এসেই মেশিন ও ঘর পরিষ্কার,সারা দিন মেশিন চালকের সহযোগি হয়ে কাজ,দুপুরের রোদে প্রেস পট্টি থেকে চারমাথা এলাকার মহাজনের বাড়ীতে গিয়ে খাবার আনা সহ সার্বক্ষণিক ব্যস্ত এ শিশুটির মাসিক বেতন মাত্র ৩৫০ টাকা।অথচ অন্যান্য বড় শ্রমিকদের মাসিক বেতন ২০০০/৩০০০টাকা।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেস শ্রমিকের কাছে জানা যায় ছোট শিশু শান্ত ও অল্পেই তুষ্ট থাকায় শিশু শ্রমিকরা এর কোন প্রতিবাদ করেনা।ফলে এমন অসম পারিশ্রমিক ব্যবস্থা থেকেই যাচ্ছে।“এত অল্প টাকায় কেন কাজ কর বা অন্যান্যদের মত বেশি টাকা দাবি করোনা কেন?”এমন প্রশ্নের উত্তরে শিশু শ্রমিক মাসুদ(১৩) জানায়,“বেশি চাইলেই মহাজন ক্ষেইপা যাবি,কাজেত্থেকা বাদ দিবি বলে ভয় দেখায়।মহাজন কয়,না পোষালে চলে যা।কিন্তু কাজ তো করা লাগবিই,তাই করি।” শাপলা মার্কেটের  এই শিশু শ্রমিক আরও জানায়,বেশি কাজ থাকলে রাতে অভারটাইম কাজ হয়।কখনও রাত ১-২টা পর্যন্ত মেশিন চলে।কিন্তু অতিরিক্ত কাজ করলে বড় শ্রমিকদের বেশি টাকা দেয়া হলেও তারা পায় না।মহাজনকে বললে কাজে ভুল করা,কাজ না করা,এক দিন না আসা,দেরিতে আসা,ছোটখাটো ক্ষতি সহ নানান দোহাই দিয়ে পার করে দেয়।তাই পরবর্তীতে আর কোনদিন চাওয়ার সাহস পাওয়া যায় না।

এদিকে ১৮ বছরের কম বয়সী হওয়ার কারনে প্রেসপট্টি শ্রমিক সমিতির সদস্য না হওয়ায় এরা কোন দাবি ,প্রতিবাদ বা চাহিদা জানাতে পারে না।ফলে সমপরিমাণ পারিশ্রমিক পায় না।আর বড় শ্রমিকরাও অসচেতন থাকায় এদের জন্যে কোন দাবিও ওঠে না।তৈরি হয় না কোন নীতি নির্ধারনী।অপর দিকে শ্রমিক সংগঠনের সদস্য হওয়া শ্রমিকরা আহত বা অসুস্থ হওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনে সমিতি থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলেও এরা তা থেকেও বঞ্চিত।অথচ তুলনামুলকভাবে শিশু শ্রমিকরাই বেশি অসুস্থ বা আহত হয়ে থাকে।এত কম পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কথা বললে বেশ ক’জন বড় শ্রমিক জানায়,“ছোটদের বেতন বাড়ানো তো দূরের কথা ,বেশির ভাগ মালিকই শিশু শ্রমিক নিতেই বেশি আগ্রহী হয় কম বেতন দেওয়ার জন্যে।তারা দেখেনা সে কতটুকু পরিশ্রম করল,দেখে তাদের বয়স।”

প্রেস শ্রমিক সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতিকে শ্রমিকদের এমন বৈষম্যের কথা জানালে তিনি তা স্বীকার করে বলেন,সত্যিই শিশু শ্রমিকরা বড়দের সমান অথবা কখনও বেশি পরিশ্রম ও সময় দেয়,কিন্তু মহাজনরা তাদের উপযুক্ত টাকা দেয় না।আর সমিতির সদস্য না হওয়ার কারণে তাদের অধিকারের ব্যাপারেও কেউ কোন মুখ খুলেনা।তাদের মজুরি সমান হওয়া উচিত।তিনি আরও জানান,শিশু শ্রমিকদের এ ব্যাপারে অচিরেই তারা ব্যবস্থা নেবেন এবং শিশু শ্রমিকদেরও সমিতির সদস্য পদ দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়,শ্রমিক সমিতির নিবন্ধনকৃত সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫’শ।সকল বিভাগ মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১৫০০ জন।এর মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি।এই শিশু শ্রমিকরা কি তাহলে পাবে না তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক?

বিস্ময় ব্যক্তিত্ব !

আবদুর রহমান সালেহ: বাজারে খুচরা বিক্রেতারা যখন পি,সি সরকারের জাদুবিদ্যা বই বিক্রি করছিলো আমার বন্ধু সোহাগ তখন মনোযোগ দিয়ে ভাবতো; কিভাবে পি,সি সরকারের মতো বিখ্যাত জাদুকর হওয়া যায়! মজার মজার জাদু দেখিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া যায়। অসম্ভব অধ্যবসায়ী সোহাগ বাজারের ক্যানভাসারদের কাছে ধর্না দিয়ে পি,সি সরকার কিংবা জুয়েল আইচের মতো খ্যাতিমান জাদুকর হতে পারেনি বটে। তবে হাতের তালুতে আগুন জ্বালিয়ে একটি ভেল্কি দেখিয়েই আমাদের কয়েকজনের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল ও। অসাধারণ কোয়ালিটি না থাকলে অন্তত জাদুকর হওয়া যায় না। সোহাগের দৃঢ়চেতা পারফরমেন্স দেখে সেদিন মনে মনে এরকম ভাবনারই ঊদয় হয়েছিল।
আমার বন্ধু সোহাগের সেই ভেল্কিবাজির (মতান্তরে জাদুবিদ্যা!) সময়টা ছিল গত শতাব্দীর (১৯৯৯)। প্রাইমারীতে অধ্যয়নরত সময়ের ঘটনা হওয়ায় কিনা জানিনা। স্মৃতির অতল গহ্বর থেকে সেই ঘটনাটি আজকের ২০১৫-তে এসেও যেহেতু হারিয়ে যায়নি, সেহেতু বলাই যায় সোহাগের পারফরমেন্সে বিশেষ কিছু ছিল। সম্পূর্ণ অন্যরকম কিছু। তা না হলে এতদিন পরেও স্মৃতিভা-ার থেকে ঘটনাটি হারিয়ে গেলো না কেন?
প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক। মাধ্যমিক পেরিয়ে মহাবিদ্যালয়। মহাবিদ্যালয়কেও বিদায় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে এসে যখন পি,সি সরকারের জাদুবিদ্যার প্রতি আগ্রহ হারিয়েই যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে পরিচয় হলো অন্য এক জাদুকরের সাথে। আমি জুয়েল আইচের মতো বিখ্যাত জাদুকরের কথা বলছি না। এই জাদুকরের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি হাতের তালুতে আগুন জ্বালানোর মতো ভেল্কিবাজিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। ছিলেন না কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাঁর ভক্তদের সাথে ভেল্কিবাজি করার। পি,সি সরকার, জুয়েল আইচের জাদুবিদ্যা মানুষকে ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খাওয়ায়। সকলেই জানে যে, তাদের পারফরমেন্সের পুরোটাই কৌশলের উপর নির্ভরশীল। কৌশলের বাইরে একটুও শেখার নেই, নেই ভাবারও। আমি যে জাদুকরের কথা বলছি তিনি ছিলেন অক্ষরের জাদুকর। ‘অক্ষর’ দিয়েও যে জাদু দেখানো যায়, বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবেও মারা যায়! এটা তাকে না দেখলে, তার শিল্পকর্মের সান্নিধ্যে না আসলে হয়তো উপলব্ধিই করা যেত না। অক্ষর থেকে শব্দ। শব্দ থেকে শব্দের সমাহার। তারপর শুরু জাদুকরের জাদুর প্রতিটি ধাপ। টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্তের। ‘কথার জাদুকর’ হিসেবে তার উপাধিটাও বেশ মজার। অন্য কারো না, আমি যে হুমায়ূন আহমেদ নামের একজন অসাধারণ লেখক, মানুষ ও চলচ্চিত্রকার সম্পর্কে লিখছি এতে কি কারো সন্দেহ আছে? তাঁর সম্পর্কে তো এতো এতো বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। তাহলে কেন কষ্ট করে তাঁর সম্পর্কে ‘অযথা’ অক্ষর, শব্দের অপচয় করবো। এর দরকার’ই বা কতটুকু?

১৯৯৯ সালের ঘটনা ২০১৫ পর্যন্ত মনে থাকাটা কতটুকু বিস্ময়ের জানিনা। তবে আপনার সম্মোহনী পারফরমেন্স আমার স্মৃতিবিভ্রমের পূর্ব পর্যন্ত যে মনে থাকবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ভালো থাকবেন প্রিয় বিস্ময় ব্যক্তিত্ব। শুভ কামনা আপনার জন্য।

বাল্য বিবাহ বন্ধ করুন

 মুসাব্বির হোসেনঃ  অল্প বয়সে বিবাহ আর অল্প বয়সেই সন্তানের মা বাবা হওয়া খুবই চাঞল্যকর বিষয়। ১৯৮৪ সালের সংশোধনি বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন অনুসারে পরুষের বয়স ২১ বছর ও নারীর বয়স ১৮ বছর। এর ব্যাতিক্রম হলে দুই পক্ষের অভিভাবক ও স্থানীয় কাজীসহ শাস্তির বিধান রয়েছে।

তবুও বর ও কনে পক্ষের সমোঝতার মাধ্যমে স্থানিয় প্রশাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাল্য বিবাহ হচ্ছে। এসবের মূল কারণ দারিদ্রতা, পারিবারিক অসচেতনতা, কন্যা শিশুর প্রতি নিতিবাচক দৃষ্টিপাত ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব। তাছাড়াও রয়েছে ভূয়া জন্ম সনদের মাধ্যমে বয়স বাড়ানোর কৌশল।অল্প বয়সে বিয়ে কণ্যা শিশুর স্বাস্থ্যকে ঝুকির মুখে ফেলেছে। এর কারণে মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুকি প্রচুর পরিমানে বেড়েছে। বাংলাদেশে কিশোর কিশোরিদের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দিগুণ ও শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ গুন।এছাড়া ইউনিসেফ এর হিসাব অনুযায়ী ২০ বছর বা এর বেশি বয়সের নারিদের তুলনায় ১৮ বছরের নিচের প্রসূতিদের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ২৫ গুন এবং মায়েরা ৫০ শতাংশ মৃত সন্তান জন্ম দেয়। তাছাড়া যে সব বাচ্চা জন্ম নেয় তাদের মধ্যে বেশির ভাগই হয় বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধি।তার সাথে মারও দেখা দেয় রক্ত শূন্যতা বা ঘাতক ব্যাধি। মূলত কণ্যা শিশুরা কিশোরী বয়সে সংসার করার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তত নন।ফলে অল্প বয়সে বিয়ের কারণে শিশু কিশোরীরা সোনালি শৈশব, সুখ স্বাচ্ছন্দময় ও সভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। এসব কারনে কন্যাশিশু কিছুটা মানসিক ভারসাম্যও হারায়।

তাদের সংসার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। কিশোরী বধুরা নানা ভাবে নির্যাতিত হয়। পরিবারে কলহ বিবাদ সবসময় লেগেই থাকে। এর জন্য বহু বিবাহের হার বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায় যে বাল্য বিবাহ রোধের জন্যে শুধু দেশের সরকারকেই এগিয়ে আসলে হবে না, বরং দেশের প্রত্যেক পরিবার ও প্রত্যেক মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং এ নির্যাতন রোধে স্বচেষ্ট থাকতে হবে।তাহলইে বাল্য বিবাহ বন্ধ বা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।

এবোলা একটি মারাত্মক ভাইরাস !

এবোলা26102014125247pm0,,16120985_303,00 ভাইরাসে সংক্রমিত হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যই অবধারিত৷ এই অসুখের ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি এখন পর্যন্ত৷ তবে একটা ভাল খবর হলো খুব সংক্রামক নয় রোগটি৷ এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না৷ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে কঙ্গো, সুদান, গাবন ও আইভরিকোস্টে এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি৷ দেহের তরল পদার্থের মাধ্যমে সংক্রমণ সাধারণত এবোলা ভাইরাস বাতাসে নয়, দেহের তরল পদার্থ রক্ত, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়৷ সরাসরি শারীরিক সংযোগের মাধ্যমে ঘটে থাকে সংক্রমণ৷ যেমন ভাইরাসে আক্রান্ত কারো সেবা করলে৷ এ কারণে হাসপাতালগুলিতে এর বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে৷ ভাইরাসরা বাহকের প্রতিটি সেলেই বিস্তৃত হতে পারে৷ এছাড়া জীবজন্তু বিশেষ করে বাঁদুড় এই ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ অসুস্থ বা মৃত জন্তুর সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ হতে পারে৷ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে এই ভাইরাসকে লম্বা ও পাতলা সুতার মতো মনে হয়৷ এগুলির অনেক প্রজাতি রয়েছে৷ বিশেষ কয়েকটি মানুষকে অসুস্থ করতে পারে৷ আর এরকম হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয়৷ আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হতে থাকে দুই থেকে একুশ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হতে থাকে৷ মাথাব্যথা, পেশিব্যথা ও কাঁপুনি দেখা দেয়৷ রুচি নষ্ট হয়ে যায়৷ বমি ও পেটখারাপ হয়৷ পেটের শিরায় টান খায়৷ এক ধরনের জ্বর হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়৷ বিশেষ করে পেট ও অন্ত্রের নালী এবং প্লীহা ও ফুসফুস আক্রান্ত হয়৷ যা ভুক্তভোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়৷ টিকা বা ওষুষ বের হয়নি এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা বের হয়নি৷ বের হয়নি ওষুধ বা থেরাপিও৷ এবোলার সংক্রমণ ও মহামারির হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া৷ হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে৷ কাজ করতে হবে গ্লাভস পরে৷ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ বাঁচিয়ে চলতে হবে৷ প্রথম ১৯৭৬ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে রোগটি লক্ষ্য করা যায়৷ বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে আফ্রিকার দেশগুলিতে ১৫টি মহামারি দেখা গিয়েছে৷ মারা গিয়েছে ১৩০০-এর বেশি মানুষ ৷ ইদানীং গিনি ও সম্ভবত লাইবেরিয়া এই ভাইরাসের কবলে পড়েছে৷ এর আগে ২০১২ সালে উগান্ডা ও কঙ্গো হয়েছিল এবোলার শিকার৷

একাকি শিশুর অনেক সমস্যা !

21092014115335ama‘বাসায় থাকলে সারা দিন টিভি দেখি আর কম্পিউটারে গেমস খেলি। কিন্তু এসব ভালো লাগে না। সব সময় ইচ্ছে করে মায়ের সঙ্গে থাকতে! একা একা খুব খারাপ লাগে।’ কথাগুলো বলছিল শামা। সে রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওর মা-বাবা দুজনই কর্মজীবী। মা পেশায় সাংবাদিক। কথা হলো শামার মা আফরোজা ইসলামের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শামা যখন ছোট ছিল, তখন বেশি সমস্যা হয়েছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনেই চাকরি করি। দুজনেই যখন বেরিয়ে যেতাম, তখন ও কার কাছে থাকবে, এই নিয়ে ভীষণ চিন্তা হতো। প্রথম প্রথম বুয়ার কাছে রেখে যেতাম। শামার তখন আড়াই বছর বয়স। একদিন ওর জন্য দুধ বানিয়ে ফ্রিজে রেখে এসেছিলাম। বুয়াকে বলেছিলাম তিন ঘণ্টা পর গরম করে খাওয়াতে। আট ঘণ্টা কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি, ফ্রিজে দুধ ওই রকমই আছে। বুয়াকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, ‘‘কান্দে নাই, তাই খাইতে দিই নাই।’’ বুয়ার কাছে মেয়েকে রেখে যেতে আর ভরসা পেলাম না। আমার মায়ের বাসায় রেখে আসতাম। অফিস শেষে আবার সেখান থেকেই নিয়ে আসতাম! কী করব! আমার অফিসে তো কোনো শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র নেই। তাহলে হয়তো এত সমস্যায় পড়তে হতো না।’ সিমিন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ওর মা-বাবা দুজনই বাইরে কাজ করেন। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময়ই ওকে একা থাকতে হয়। একা থাকার ফলে তার কিছু মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সিমিন বলে, ‘একা একা থাকতে ভালো লাগে না। বাইরে যাওয়াও বারণ । তখন আর কী করব! কল্পনায় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। মনের মধ্যেই বন্ধুদের ডাকি। ওদের সঙ্গে খেলি।’ সিমিনের মা জানান, ‘মেয়ে হয়তো অনেক দিন ধরেই এই সমস্যায় ভুগছে। তবে আমরা এটা বুঝতে পেরেছি মাত্র কিছুদিন আগে। দেখতাম, মেয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলে। আর একা থাকতে পছন্দ করে। আমরাও কিছু বললে খুব বিরক্ত হতো। তারপর ডাক্তার দেখালাম। এখন নিয়মিত ওর কাউন্সেলিং চলছে।’ শামা ও সিমিন একক পরিবারে বাস করে। আবার তাদের দুজনেরই মা-বাবা চাকরিজীবী। ফলে তারা মা-বাবার পরিচর্যা তেমন পাচ্ছে না। ফলে দুই শিশুরই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে গড়ে উঠছে একক পরিবার। সংসারের প্রয়োজনে সেই পরিবারের মা-বাবা দুজনকেই চাকরি করতে হচ্ছে। নগরজীবনের এই বাস্তবতায় এসব পরিবারের শিশুরা দীর্ঘ সময় একা একা সময় কাটাচ্ছে। মুখোমুখি হচ্ছে নানা সমস্যার। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুদের দেখাশোনা করার মতো কাউকে পাওয়া যায় না বলে অনেক মাকেই চাকরি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তেমনই একজন টুটুল আর মিতুলের মা ইয়াসমিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ব্যাংকার হতে চেয়েছিলাম। স্বপ্নপূরণও হয়েছিল। একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতাম। তার কিছুদির পর ছেলে টুটুল হলো। প্রথম দিকে ওকে রেখে অফিসে যেতাম। সকাল ছয়টা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আটটায় অফিসে ছুটতাম। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেত। আর এদিকে ছেলেকে দেখাশোনার কেউ ছিল না। কাজের লোকের ওপর ভরসা করতে পারছিলাম না। তাই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, চাকরি ছেড়ে দেব। দিলামও। সে-ও ১০ বছর আগের কথা। আমরা কয়েকজন একসঙ্গে নিয়োগ পেয়েছিলাম। সেই সহকর্মীদের বেতন এখন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এখন ভাবি, চাকরিটা না ছাড়লে মাস শেষে এতগুলো টাকা আমার হাতে আসত। এসব টাকা সংসারের কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিজের অনেক শখও পূরণ করতে পারতাম।’ বর্তমানে অনেক নারী বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত আছেন। তাই ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা সন্তানকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারছেন না। কর্মজীবী মায়েরা শিশুদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাছে রেখে যান। ফলে দীর্ঘ সময় শিশুটি গৃহকর্মীর সঙ্গে বাস করে। গৃহকর্মীর গুণগত মান কম হওয়ার ফলে শিশটিরও গুণগত মান কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে শিশুদের পরিচর্যার অনিয়ম, নির্যাতন ঘটছে এই গৃহকর্মীদের দ্বারাই। আবার অনেক সময় দেখা যায়, গৃহকর্মীর সহায়তায় শিশু চুরির ঘটনাও ঘটছে। আর এর ফলে যাঁরা বাসায় সন্তানকে একা বা পরিচারিকার কাছে রেখে যান, তিনি কর্মস্থলে গিয়েও কাজে মন দিতে পারেন না। আর এই একা একা বড় হওয়া শিশুরাও বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভোগে। একক পরিবারের শিশুরা, যৌথ পরিবারের শিশুদের চেয়ে ভিন্ন মানসিকতার হয় এমনটাই বললেন ভিকারুননিছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি, একক পরিবারের বাচ্চারা কারও সঙ্গে মিশতে চায় না। বেশি মানুষ দেখলে ঘাবড়ে যায়। নিজের আনা টিফিন অন্যের সঙ্গে ভাগ করে খেতে পছন্দ করে না। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রায়ই দেখা যায়, শিশুরা খুব কাঁদে। কারণ, তারা একা একা বড় হয়ে অভ্যস্ত। একক পরিবারের এই শিশুরা শুরুতে স্কুলেও আসতে চায় না। কিন্তু কিছুদিন পরই ঠিক হয়ে যায়। এই শিশুদের খুব বেশি শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বও হয় না। তাদের এক বা দুজন বন্ধু থাকে। আর যৌথ পরিবারে বড় হওয়া শিশুরা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। তারা অনেক মানুষের সঙ্গে মেশে। অন্যের সঙ্গে সবকিছু ভাগ করে নিতে পছন্দ করে।’ কিছু ছোট ছোট উদ্যোগ এই শিশুদের শৈশবকে সুন্দর করতে পারে, এমনটাই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন। তিনি বলেন, ‘একক পরিবারের শিশুদের জন্য সমাধান হতে পারে কয়েকটি। যেমন, যৌথ পরিবার ভেঙে গেলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকতে হবে। যাতে শিশুটি প্রতিবেশীর কাছ থেকে সাহচর্য পায়। শিশুকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। শিশুকে সময় দেওয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ তাকেই দিতে হবে। অন্যদিকে যেসব একক পরিবারের মায়েরা কর্মজীবী, তাদের প্রতিষ্ঠানে শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানে দিবাযত্নকেন্দ্র থাকলে, শিশুরা যেমন নিরাপদ থাকে, মায়েদের কাজের গুণগত মানও ভালো হয়।’ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০০৬ সালে দিবাযত্নকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে বর্তমানে ৬৮টি শিশু সেবা পায়। ব্যাংকে কর্মরত মায়েরা খাবার বিরতির সময় সন্তানকে দেখে যেতে পারেন। আর বুকের দুধ খাওয়াতে হলে আরও বেশিবার দেখা করার সুযোগ পান। এখানে বাচ্চাদের পড়ালেখা, খেলাধুলা, খাওয়া ও ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। আর প্রতিষ্ঠানে শুধু নারী কর্মীই নন, পুরুষ কর্মীরাও তাঁদের সন্তানকে এখানে রাখতে পারেন। ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘এটা আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। আমি যখন এই প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই এখানে একটি দিবাযত্নকেন্দ্র খোলার ব্যাপারে কাজ করছিলাম। পরবর্তী সময়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা প্রতিটি শিশুর খরচের মাত্র ৩৫ ভাগ অর্থ অভিভাবকের কাছ থেকে নিয়ে থাকি। বাকি অর্থ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি দেয়। এই ব্যবস্থার ফলে প্রতিষ্ঠানের মায়েরা খুব স্বস্তিতে কাজ করেন। যেটা প্রতিষ্ঠানের জন্যও লাভজনক। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও উৎসাহিত করতে পারে।’

যেভাবে কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা চোখ ভালো রাখবেন

কম্পিউটারে কাজ করার সময় মাঝে মাঝে চোখের পলক ফেলা ভালো উপায়। এতে করে চোখে আদ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে এবং শুষ্কতা সৃষ্টি হয় না। অথচ কম্পিউটার স্ক্রিনের কারণে আমরা চোখের পলক কম ফেলি, এমনটি চোখের জন্য ক্ষতিকর। যথাযথ আলোর পরিবেশে কম্পিউটারে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। দিনেরবেলায় কম্পিউটার ব্যবহারের সময় মনিটরের উল্টোদিকে মনিটরে আলো প্রতিফলিত হয় এমন দরজা জানালা বা লাইট বন্ধ রাখুন। কম্পিউটারটি এমন স্থানে ব্যবহার করুন যেখান থেকে মনিটরে আলোর প্রতিফলন না ঘটে। আবার পুরোপুরি অন্ধকার ঘরেও কম্পিউটার চালাবেন না। কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময় পর্দার সঙ্গে আই-লেভেল উচ্চতার সামঞ্জস্যতা রাখতে হবে। বিষয়টি চোখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটারের উজ্জ্বলতা সহনীয় মাত্রায় রেখে কাজ করা উচিত। উজ্জ্বলতা বেশি হলে চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে এবং অস্বস্তিকর অনুভূত হয়। চোখে শিথিল এবং আরামদায়ক অনুভূতির ক্ষেত্রে সেরা রং বিবেচনা করা হয় সবুজ রংকে। কাজের ফাঁকে জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে তাকাতে পারেন। কম্পিউটার স্ক্রিনে পড়া বা লেখার জন্য ছোট ফন্ট ব্যবহার করবেন না। চোখের জন্য আরামদায়ক ফন্ট নির্বাচন করুন। কারণ ছোট ছোট লেখা চোখের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে। দুই হাতের তালু একটি অপরটির সঙ্গে ঘর্ষণ করে গরম করে তুলুন। তারপর আপনার হাতের তালু চোখের ওপর রাখুন কমপক্ষে ১ মিনিট। এটি ক্লান্ত চোখে আরামের আবেশ আনতে সহায়তা করবে। কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করার সময় চোখ সুরক্ষার খুব উপযোগী একটি উপায় হচ্ছে, ২০-২০-২০। প্রতি ২০ মিনিট পর পর কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিন এবং কমপক্ষে ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর ওপর দৃষ্টিপাত করুন অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য। চোখের বিশ্রামের জন্য ২০-২০-২০ নিয়মটি মেনে চললে চোখে যথেষ্ট আদ্রতা থাকে এবং চোখের ওপর চাপ কমে। মনিটর নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। মনিটরে জমা ধুলাবালি দৃষ্টিশক্তিকে ব্যাহত করে। ফলে মনিটরের অক্ষরগুলো পড়তে সমস্যা হয় এবং চোখের ওপর চাপ পড়ে। তাই কম্পিউটারে ধুলা-ময়লা কিংবা আঙ্গুলের ছাপ পড়তে দেবেন না।

সব শিশু সুস্থ থাকুক।

সব শিশু সুস্থ থাকুক। এমন আনন্দে থাকুক। এমনটাই চাই।  টিয়ারা ও রাজেশ্বরীশিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবার চিন্তার শেষ নেই। শিশুর ভালোমন্দের ওপরই যেন নির্ভর করে তাঁদের পৃথিবী। শিশুর একটু অসুখ করলেই ভয় পেয়ে যান তাঁরা। এর মধ্যে কোনো কারণে শিশুর যদি হঠাৎ খিঁচুনি হয়, তাহলে তাঁরা পড়ে যান মারাত্মক দুশ্চিন্তায়। শিশুর শরীরে কাঁপুনি হলেই কি তা খিঁচুনি? নাকি অন্য কিছু? এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু স্নায়ুরোগ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে, তবে শরীরে কাঁপুনি উঠলেই তা খিঁচুনি নাও হতে পারে।’ কেন হয় শিশুর খিঁচুনি? জন্মের সময় বা জন্মের আগে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব, মস্তিষ্কে আঘাত, মস্তিষ্কে জন্মগত কোনো ত্রুটি, মৃগীরোগ, মস্তিষ্কের টিউমার অথবা মস্তিষ্ক বা এর আবরণীতে কোনো জীবাণুর সংক্রমণের কারণে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে। জ্বর হলেও অনেক সময় শিশুর খিঁচুনি হতে পারে। তবে জ্বরের কারণে শিশুর শরীরে কাঁপুনিও হতে পারে, আবার হঠাৎ কোনো কারণে ভয় পেলেও শিশুর শরীরে কাঁপুনি হতে পারে; কিন্তু কাঁপুনি হলেই সব সময় তা খিঁচুনি নয়। কী করে বুঝবেন শিশুর খিঁচুনি হচ্ছে? অস্বাভাবিক কাঁপুনির পাশাপাশি শিশুর হাত-পা শক্ত হয়ে যায়, চোখ উল্টে যায়, শরীরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে। অনেক সময় শিশুর মুখ দিয়ে ফেনার মতো কিছু বের হতে পারে। শিশুর জিহ্বায় কামড় লেগেও যেতে পারে। আবার অনেক সময় এ অবস্থায় শিশুর প্রস্রাব বা পায়খানা হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ শিশুর খিঁচুনি হলে কী করবেন? শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন। ধারালো কোনো জিনিস বা গরম পানি আশপাশে থাকলে সরিয়ে নিন। তাকে মাথা একদিকে কাত করে শুইয়ে দিন। পাঁচ মিনিট সময় ধরে খিঁচুনি হলে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে খিঁচুনি যত সময় ধরেই হোক না কেন, খিঁচুনি থেমে গেলে অবশ্যই তাকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। খিঁচুনি হচ্ছে এ অবস্থায় যা করা যাবে না যখন শিশুর খিঁচুনি হচ্ছে, তখন শিশুর মাথায় পানি দেওয়া, তার হাত-পা টানা, তার মুখে কিছু ঢোকাতে চেষ্টা করা বা তার আশপাশে হইচই করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হতে পারে জটিলতা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ওষুধ খাওয়াতে হবে শিশুকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনি ভালো হয়ে যাওয়ার পরও চিকিৎসক ওষুধ সেবন করতে বলতে পারেন। তাই মানতে হবে। কারণ চিকিৎসা সঠিকভাবে না হলে খিঁচুনির কারণে অনেক সময় শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

কার্টুন !

ইসতিয়াক আহমেদ শাওন:  কার্টুন বলতে আমরা বুঝি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হাস্যনসাত্নক ছবি বা ব্যঙ্গচিত্র সেই সাথে টিভিতে প্রচারিত ডরিমন, টম এন্ড জেরি এবং মিনা-র কার্টুন। লন্ডনের পাঞ্চ পত্রিকার ১৮৪৩ সালের ১০৫ নম্বর সংখ্যায় জন রিচ এর আঁকা একটি হাস্যরসাতক ছবিকে সর্বপ্রথম কার্টুন আখ্যা দেয়া হয়। স্কেচটি ছিল তখনকার বিখ্যাত একটি প্রদর্শনীকে ব্যঙ্গ করে আঁকা। কিন্তু কার্টুন শব্দটি এর আগেও ছিল। পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতকে দেয়ালের গায়ে ছবি আঁকার আগে শিল্পী কাঠকয়লা, পেনসিল, সাদা বা লাল চকখড়ি দিয়ে ছবিটির একটি প্রাথমিক খসড়া করে নিতেন। কখনো বা কাগজেও এঁকে নিতেন। ঔই প্রাথমিক খসড়াটিকে ইতালিয় ভাষায় বলা হত “কারটোন”। এই কারটোন শব্দটি থেকে উৎপত্তি কার্টুন শব্দের। তবে আমরা যাকে কার্টুন বলি বিশ্বের অন্য বেশ কয়েকটি দেশে তাকে বলা হয় “ক্যারিকেচার”। কেবল ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে ব্যঙ্গচিত্রার্থে কার্টুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ষোড়শ শতকের শেষদিকে কার্টুন শব্দের সংজ্ঞা কিছুটা বদলে যায়। শুধু মাত্র ছবি আঁকার খসড়াকেই নয় যেকোন খসড়া ড্রইংকেই কার্টুন আখ্যা দেওয়া হতে থাকে। ১৮৪৯ সালে লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে খসড়া চিত্রের, অর্থাৎ আগে যে ধরনের চিত্রকে কার্টুন আখ্যা দেয়া হতো, তার এক বড় মাপের প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় ইংল্যান্ড এর রানী ছিলেন ভিক্টোরিয়া , জন লিচ (কার্টুনিষ্ট) রানীর এক ব্যঙ্গচিত্র এঁকে দেখান। চিত্রটির নাম দেয়া হয় কার্টুন। সেই থেকেই হাস্যনসাত্নক যাবতীয় ব্যঙ্গচিত্রের নাম হয়ে যায় কার্টুন। এর আগে এ ধরনের ছবিকে বলা হতো পেন্সিলিং। তখনকার সময়ে কার্টুন এঁকে কাউকে কষ্ট দেয়া নয় বরং জনসাধারনকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করা এবং নির্মল হাস্যরস যোগানই ছিল কার্টুন আঁকার প্রধান উদ্দেশ্য। তবে সে সময় রাজনীতি নিয়ে কার্টুর এঁকেও বিখ্যাত হয়েছিলেন ডেভিড লো এবং ভিকি-র মতো কার্টুানিষ্টরা। আমাদের এ উপমহাদেশে কার্টুন আসে ইংরেজদের হাত ধরে। ১৮৫০ সালে “দিল্লি গেজেট” প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় দিল্লি স্কেচ বুক নামে একটি মাসিক পত্রিকা। ধরা হয়ে থাকে যে এটিই এ উপমহাদেশের সর্বপ্রথম কার্টুন পত্রিকা। ১৮৫৯ সালে দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয় আর একটি কার্টুন পত্রিকা. ইন্ডিয়ান পাঞ্চ। এই সময়ের পরই কার্টুন পত্রিকার পাতা থেকে কার্টুন উঠে আসে সংবাদ পত্রের পাতায়। যার ধারাবাহিকতা চলছে এখন পর্যন্ত। এখনতো আমরা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপ্রত্রের প্রথম পাতায় শিশির ভট্টাচার্য, খলিল, সাদাদ প্রমুখ বাংলাদেশের নামকরা কার্টুনিষ্টদের আঁকা কার্টুন দেখতে পাই। সংবাদ পত্রের পাতায় কার্টুনের মাধ্যমে উঠে আসে সমসাময়িক সমাজ চিত্র এবং বিশ্ব পরিস্থিতি। আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলোকেই প্রযুক্তির মাধ্যমে এ্যনিমেটেড করার কারনেই আমরা আজ মিনা,ডরিমন,টম এন্ড জেরির মতো শতশত কার্টুন দেখতে পাই টেলিভিশনে। সবশেষে বলে যাই কার্টুন প্রকাশ করে বিখ্যাত হয়েছে এমন কয়েকটি পত্রিকার নাম যেমন ইংল্যান্ডের পাঞ্চ, দিল্লি স্কেচ বুক (১৮৫০), ইন্ডিয়ান পাঞ্চ (১৮৫৯), পার্শি পাঞ্চ (১৮৭৩), বসন্তক (১৮৭৪), পঞ্চানদ (১৮৭৭), এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয় বিভার, বঙ্গবাসী সহ আরো কয়েকটি পত্রিকা।