কার্টুন !

ইসতিয়াক আহমেদ শাওন:  কার্টুন বলতে আমরা বুঝি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হাস্যনসাত্নক ছবি বা ব্যঙ্গচিত্র সেই সাথে টিভিতে প্রচারিত ডরিমন, টম এন্ড জেরি এবং মিনা-র কার্টুন। লন্ডনের পাঞ্চ পত্রিকার ১৮৪৩ সালের ১০৫ নম্বর সংখ্যায় জন রিচ এর আঁকা একটি হাস্যরসাতক ছবিকে সর্বপ্রথম কার্টুন আখ্যা দেয়া হয়। স্কেচটি ছিল তখনকার বিখ্যাত একটি প্রদর্শনীকে ব্যঙ্গ করে আঁকা। কিন্তু কার্টুন শব্দটি এর আগেও ছিল। পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতকে দেয়ালের গায়ে ছবি আঁকার আগে শিল্পী কাঠকয়লা, পেনসিল, সাদা বা লাল চকখড়ি দিয়ে ছবিটির একটি প্রাথমিক খসড়া করে নিতেন। কখনো বা কাগজেও এঁকে নিতেন। ঔই প্রাথমিক খসড়াটিকে ইতালিয় ভাষায় বলা হত “কারটোন”। এই কারটোন শব্দটি থেকে উৎপত্তি কার্টুন শব্দের। তবে আমরা যাকে কার্টুন বলি বিশ্বের অন্য বেশ কয়েকটি দেশে তাকে বলা হয় “ক্যারিকেচার”। কেবল ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে ব্যঙ্গচিত্রার্থে কার্টুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ষোড়শ শতকের শেষদিকে কার্টুন শব্দের সংজ্ঞা কিছুটা বদলে যায়। শুধু মাত্র ছবি আঁকার খসড়াকেই নয় যেকোন খসড়া ড্রইংকেই কার্টুন আখ্যা দেওয়া হতে থাকে। ১৮৪৯ সালে লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে খসড়া চিত্রের, অর্থাৎ আগে যে ধরনের চিত্রকে কার্টুন আখ্যা দেয়া হতো, তার এক বড় মাপের প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় ইংল্যান্ড এর রানী ছিলেন ভিক্টোরিয়া , জন লিচ (কার্টুনিষ্ট) রানীর এক ব্যঙ্গচিত্র এঁকে দেখান। চিত্রটির নাম দেয়া হয় কার্টুন। সেই থেকেই হাস্যনসাত্নক যাবতীয় ব্যঙ্গচিত্রের নাম হয়ে যায় কার্টুন। এর আগে এ ধরনের ছবিকে বলা হতো পেন্সিলিং। তখনকার সময়ে কার্টুন এঁকে কাউকে কষ্ট দেয়া নয় বরং জনসাধারনকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করা এবং নির্মল হাস্যরস যোগানই ছিল কার্টুন আঁকার প্রধান উদ্দেশ্য। তবে সে সময় রাজনীতি নিয়ে কার্টুর এঁকেও বিখ্যাত হয়েছিলেন ডেভিড লো এবং ভিকি-র মতো কার্টুানিষ্টরা। আমাদের এ উপমহাদেশে কার্টুন আসে ইংরেজদের হাত ধরে। ১৮৫০ সালে “দিল্লি গেজেট” প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় দিল্লি স্কেচ বুক নামে একটি মাসিক পত্রিকা। ধরা হয়ে থাকে যে এটিই এ উপমহাদেশের সর্বপ্রথম কার্টুন পত্রিকা। ১৮৫৯ সালে দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয় আর একটি কার্টুন পত্রিকা. ইন্ডিয়ান পাঞ্চ। এই সময়ের পরই কার্টুন পত্রিকার পাতা থেকে কার্টুন উঠে আসে সংবাদ পত্রের পাতায়। যার ধারাবাহিকতা চলছে এখন পর্যন্ত। এখনতো আমরা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপ্রত্রের প্রথম পাতায় শিশির ভট্টাচার্য, খলিল, সাদাদ প্রমুখ বাংলাদেশের নামকরা কার্টুনিষ্টদের আঁকা কার্টুন দেখতে পাই। সংবাদ পত্রের পাতায় কার্টুনের মাধ্যমে উঠে আসে সমসাময়িক সমাজ চিত্র এবং বিশ্ব পরিস্থিতি। আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলোকেই প্রযুক্তির মাধ্যমে এ্যনিমেটেড করার কারনেই আমরা আজ মিনা,ডরিমন,টম এন্ড জেরির মতো শতশত কার্টুন দেখতে পাই টেলিভিশনে। সবশেষে বলে যাই কার্টুন প্রকাশ করে বিখ্যাত হয়েছে এমন কয়েকটি পত্রিকার নাম যেমন ইংল্যান্ডের পাঞ্চ, দিল্লি স্কেচ বুক (১৮৫০), ইন্ডিয়ান পাঞ্চ (১৮৫৯), পার্শি পাঞ্চ (১৮৭৩), বসন্তক (১৮৭৪), পঞ্চানদ (১৮৭৭), এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয় বিভার, বঙ্গবাসী সহ আরো কয়েকটি পত্রিকা।