নিজের বিয়ে প্র‌তি‌রোধ কর‌লো ভোলার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা

গোপাল চন্দ্র দে; শিশু সাংবাদিক ভোলা ॥

বাল্য বিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তার (১৩)। তিনি নিজেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তার বিয়ে ভেঙ্গে দেন । এ ঘটনায় পুরো শহর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফারজানা বলেন, আমার স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবো। কিন্তু বাবা-মা জোর বিয়ে ঠিক করে দেয়, কিন্তু বিয়ে নয়, পড়ালেখা করতে চাই। তাই স্বপ্ন পূরন করতেই বিয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নেই। মঙ্গলবার (২৩ মে) ও বুধবার (২৪ মে) এ ঘটনা ঘটে।

দুরন্ত সাহসি ফারজানা আক্তার বলেন, তিনি সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কানাইনগর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সিরাজ পঞ্চায়েতের মেয়ে ও ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নিয়মিত লেখাপড়া চলছিলো তার। খেলাধুলায় মেতে উঠতো সহপাঠিদের সাথে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সে হাসি আনন্দ হারিয়ে গেল। ফারজানা জানায়, একদিন আমার মা জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছ থেকে শুনতে পাই চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু কার সাথে বিয়ে হলো, বর কে আমি তার কিছুই জানতাম না। 

এর প্রতিবাদ করতে চাইলে মা জান্নাতুল ফেরদৌস ও খালা রোকেয়া বেগম বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখাতো। তাকে বিভিন্নভাবে স্কুলে আসতে বাধা সৃষ্টি করতো। যার ফলে বিদ্যালয়ে ফারজানা আক্তারের উপস্থিতি ছিলো কমে যায়।

এ অবস্থায়  মঙ্গলবার (২৩ মে) সকালে ফারজানার মা তাকে বলে, রাতে তোর জামাই আমাদের বাড়িতে আসবে। কথাটি শুনে ফারজানা আতঙ্কে উঠে। জামাই আসা উপলক্ষে বাজার সদাই করা হয়। কাউকে কিছু না বলে ফারজানা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ওই দিন সকালে ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে বিষয়টি শিক্ষকদেরকে জানায়। সবকিছু শুনে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শরমিন জাহান শ্যামলী, এনসিটিএফ ডিস্টিক ভলান্টিয়ার এবং বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সহসভাপতি আদিল হোসেন তপুকে জানান। আদিল হোসেন তপু সংগঠনের অন্যান্য লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে যান। এই বিয়ে বন্ধ করার জন্য ফারজানা আক্তার জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি চিঠি লেখে। পরে এনসিটিএফ এবং বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ওই ছাত্রী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত কুমার সিকদারকে বিষয়টি জানান। তিনি এডিএম মোঃ আবদুল হালিমকে বিষয়টি দেখার জন্য দায়িত্ব দেন।

পরে এডিএমএর আদেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি ফোর্স সহ ওই ছাত্রীর বাড়ীতে যান। বাড়িতে গিয়ে ফারজানার পিতাকে না পেয়ে মা জান্নাতুল ফেরদৌসকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে এসে বাল্য বিয়ে সম্পর্কে তাকে বুঝানো হয় এবং ১৮ বছরের আগে বিয়ে পড়াবে না এই মর্মে মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বুধবার (২৪ মে) ফারজানার পিতা মোঃ সিরাজ পঞ্চায়াতকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। পরে জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন তাকে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন। সিরাজ পঞ্চায়েত তার ভুল বুঝতে পারেন এবং ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন ও স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মাহামুদুর রহমান ওই ছাত্রীর লেখাপড়ার জন্য ফারজানার হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম উদ্দিন ইউনিসেফের সহায়তা ও কোস্ট্র ট্রাস্টের বাস্তবায়নে ইসিএম প্রকল্প থেকে ফারজানা আক্তারের লেখাপড়ার জন্য শিশু সুরক্ষা বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।