এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম শিশুবান্ধব জেলা ঝালকাঠি।

জেলার শিশু অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশের প্রথম শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে এগিয়ে চলছে শিশু বান্ধব জেলা ঝালকাঠির ভবিষ্যত।শিশুদের মাধ্যমে তাদের নিজ আধিকার রক্ষার দাবী দাওয়া জেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারনী মহল সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে ঝালকাঠি জেলার শিশুরা বিরাট সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শিশুদের নিরন্তর এ্যাডভোকেসির ফলে ঝালকাঠি জেলার স্থানীয় প্রশাসন ও নীতি নির্ধারনী মহলও আন্তরিকতার সাথে শিশুদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সূত্রে প্রকাশ, ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন অনেক দিনের । এ স্বপ্ন যেমন শিশুদের, তেমনি শিশুদের নিয়ে যারা ভাবেন ও কাজ করেন তাদেরও । দীর্ঘ দিনের এ স্বপ্ন বাস্তবতায় মূর্ত হয়ে উঠে গত বছর ২১ ও ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু অধিকার প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মশালায় সচিব তারিক-উল -ইসলাম ও উপ-সচিব মো: আমানউল্লাহর উপস্থিতিতে। কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে ঝালকাঠির সাবেক জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাসের কাছে চাইল্ড পার্লামেন্ট প্যানেল স্পীকার সোহানুর রহমান ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে বিনির্মাণের জোড় দাবি জানায়। পরবর্তীতে শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে বিনির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ জেলার সুধীজনদের মাঝে শিশু বান্ধব জেলা সর্ম্পকে ধারণা প্রদান ও অবগত করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু বান্ধব প্লাটফর্ম সভা । সভায় ঝালকাঠি শিশু বান্ধব জেলার খসড়া ’’ধারণা পত্র’’ সকল সদস্যদের প্রদান করা হয়েছে । পরর্বর্তীতে শিশু বান্ধব জেলা কমিটির মাধ্যমে মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে চুড়ান্ত ধারণা পত্র প্রণয়ন করা হবে জানিয়েছেন জেলা শিশু সংগঠক নারগীস সুলতানা। মূলতঃ শিশু বান্ধব জেলায় শিশু অধিকার সনদকে চেতনায় ধারণ করে জাতীয় শিশু নীতি ২০১০ এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে তাদের আইন, কর্মসূচি ও বাজেট প্রনয়ণ করবে। শিশু বান্ধব জেলা গড়া একটি সমন্বিত এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। এখানে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অগ্রাধিকার পাবে এবং অগ্রগতি পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক বছর নতুন নতুন বিষয় ও কর্মসূচি সন্নিবেশিত হবে। তবে শিশু বান্ধব জেলা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া হিসাবে আশু করণীয় ধাপসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. শাখাওয়াত হোসেন জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জেলার শিশু একাডেমী, এনসিটিএফ, সরকারী-বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠান কার্যকরী ভূমিকার প্রশংসা করেন। শিশুদের উন্নয়নে কাজ করতে সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ঝালকাঠিকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে শিশুদের মতামত প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের মধ্যে ঝালকাঠিই প্রথম জেলা যে জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি জেলা উন্নয়ন সভায় সদস্যপদ পেয়েছে।এতে করে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহন সহ তাদের মতামত প্রদান করতে পারছে জেলার শিশুরা। ঘোষনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে ঝালকাঠি জেলা। এদিকে শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে ঘোষনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করা জাতীয় পর্যায়ের শিশু সংগঠন ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স শিশু বান্ধব জেলা বির্নিমানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলছে। সংগঠনটির শিশু প্রতিনিধিরা জেলা সার্বিক শিশু অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারনী মহলে নিরন্তর এ্যাডভোকেসি করে যাচ্ছে।জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটিতে সরকারের সাময়িক প্রতিবেদনের সাথে জাতীয়ভাবে শিশুদের প্রদত্ত বিকল্প প্রতিবেদনে প্রনয়নেও ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটির ঝালকাঠির শিশু নেতারা। একটি কর্মশালার আয়োজন করা যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিশু প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিশু সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী, দাতাগোষ্ঠী প্রতিনিধি, শিক্ষকসহ শিশুদের নিয়ে ভাবেন ও কাজ করেন তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো প্রয়োজন। এই কর্মশালায় শিশু বান্ধব জেলার ধারণাসমূহকে কর্মসূচীতে রূপান্তর করা যেতে পারে। কর্মশালায় সংশি­ষ্ট বিভাগ ও ব্যক্তিবগের্র সমন্বয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরী করা দরকার। যারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরী করবে। বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রণীত পরিকল্পনা ও সুপারিশসমূহ সমন্বিত ভাবে গ্রন্থিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে।জেলা প্রশাসক নেতৃত্বে সংশি­ষ্ট সকল বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটি শিশু বান্ধব জেলা গড়ার পরিকল্পনা সমূহকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। শিশু বান্ধব জেলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, উপকরণ, যানবাহনসহ জেলা প্রশাসনের একটি সেল স্থাপন করা দরকার। তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ রক্ষণাবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য স্থাপিত সেলে একটি কম্পিউটারাইজ ডাটা বেইজ প্রতিস্থাপন করা এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।সহজে বাস্তবায়নযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আশিকুর রহমান