পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপন

অদ্য ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মৌলভীবাজার ও  এনসিটিএফ

মৌলভীবাজারের জেলা কার্যনির্বাহী কমিটি পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সঃ) ১৪৩৮ হিজরী উপলক্ষ্যে ক্বেরাত,হামদ-নাত প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা,পুরষ্কার বিতরণ ও মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন করে। উক্ত মাহফিলে মোনাজাত করেন জেলা প্রশাসক মসজিদ এর খতিব। উক্ত মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন, শিশু একাডেমী লাইব্রেরিয়ান ফরিদ আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টার নজরুল ইসলাম মুহিব, এনসিটিএফ জেলা কমিটির ভলান্টিয়ার কামরুল ইসলাম ও  রোমানা আক্তার চৌধুরী। এছাড়াও উক্ত সভায় এনসিটিএফ মৌলভীবাজারের জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে উপস্থিত ছিল মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিনাথ আলাউদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজ, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর এনসিটিএফ  স্কুল কমিটি সদস্যবৃন্দ ।
img_2227 img_2239

মৌলভীবাজার এনসিটিএফ এর সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে এনসিটিএফ মৌলভীবাজারের মাসিক সভা মৌলভীবাজার শিশু একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়। মাসিক সভায় শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন, দি ফ্লাউয়ার্স হাই স্কুলে স্কুল কমিটি গঠন, শিক্ষাসফর ও সদস্য সংগ্রহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন, শিশু একাডেমী লাইব্রেরিয়ান ফরিদ আহমেদ, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাধুরী মজুমদার, এনসিটিএফ জেলা কমিটির ভলান্টিয়ার জিল্লুর রহমান, রোমানা  আক্তার চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত ভলান্টিয়ার কামরুল ইসলাম, সভাপতি তারেক আজিজ, শিশু গবেষক শাহ সামিন সাদি ও অন্যান্যরা।

আলোচনা শেষ হওয়ার পর সভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাসিক সভার সমাপ্ত ঘোষনা করেন।

The monthly meeting of NCTF Moulvibazar was held in September

The monthly meeting of NCTF Moulvibazar was held on Tuesday, September, 2016. All executive committee member was present in the meeting. In the meeting was taken new some discussible subject. This time, the district NCTF committee member was decided to Child Rights week celebration, Study tour & collect new members of several secondary school. Mr. Jasim Uddin, the District Children Affair Officer of Moulvibazar was present in the meeting.

এনসিটিএফ মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান

৬ ই জুন ২০১৬  ইং তারিখ বিকাল ৩ঘটিকায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে প্রায় অর্ধশতাধিক সুবিধা বঞ্চিত  শিশু পরিবারের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ছিল প্রতিবন্ধী । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর লাইব্রেরীইয়ান ফরিদ আহমদ,জেলা ভারপ্রাপ্ত ভলান্টিয়ার কামরুল ইসলাম, বর্তমান কমিটি ও সাবেক কমিটির সদস্যবৃন্দ।

 

NCTF Concern about Education of Deprived Children

Afser Memorial Secondary School ,a school of Jhalokathi having eight Hundred students among them 80 % is from lower income family and only One hundred and fifty children use to get scholarship,according to the headmaster statement name Mr. Jahangir Hossain. After visiting few school NCTF come to this conclusion that to ensure proper education the range of scholarship should increase so that the deprived children can enlighten their future.


                                                                                                শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাড়ানো দরকার

মেহেদী হাচান (ইমরান):

ঝালকাঠি জেলা এনসিটিএফ কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা সদরের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির উপরে বক্তব্য নেয়। ঝালকাঠি সদর থানার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে প্রথম আলোচনা হয়। প্রশ্ন সাপেক্ষে তিনি জানান তার স্কুলে ৮০০ (আটশত) এর উপরে ছাত্র-ছাত্রী আছে। এর ৮০% ই দরিদ্র্য পরিবার থেকে আগত।

তার স্কুলে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) এরও কম ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি পায়। তার মতামতে তিনি জানান সরকার উপবৃত্তি দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের আগের চেয়ে আগ্রহ বেড়েছে। আর তার স্কুলের মতোই বাংলাদেশে আরও অনেক স্কুল আছে, যেখানে উপবৃত্তি দেওয়া কষ্টকর। কারণ ৮০০ (আটশত) এর বেশী শিক্ষার্থীর ভিতরে ৮০% ই যদি থাকে দরিদ্র, তাহলেতো কষ্ট হবারই কথা। আবার ঝালকাঠি সদরের পৌর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাণীবালা সাহ প্রশ্ন সাপেক্ষে একই মতামত ব্যক্ত করেন। প্রশ্ন সাপেক্ষে তিনি বলেন যে, শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির অর্থ লেখাপড়ায় ব্যয় করে এবং বর্তমানে ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন যেভাবে উপবৃত্তি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এতে যে অসাদু শিক্ষকরা বিভিন্ন বায়না দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ তারা আত্মসাৎ করত। তার আর সুযোগ থাকবে না এবং তারও একই উপবৃত্তির পরিমাণটা যেন বাড়ানো হয় ও বাংলাদেশে যে শিশু বাজেট আছে সেটাও যেন বাড়ানো হয়। ঝালকাঠি এনসিটিএফ কার্যনির্বাহী কমিটি যে কয়টি স্কুলে গিয়েছিল প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের একই বক্তব্য যে, উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং বাংলাদেশে যে শিশু বাজেট আছে সেটিও যেন বাড়ানো হয়।

সত্যিকারের পরিবর্তন দরকার

আজকের যুগে শিশুদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যপক আয়োজনে মিছিল মিটিং হলেও প্রকৃতপক্ষে শিশুদের পাশে দাড়ানোর মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ এ প্রবাদ  বাক্যটি বর্তমান সময়ে প্রত্যেক মিছিল, মিটিং এর মূল কথা। তবে তা মুখের কথাই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ, প্রচার বা প্রসার কোনটিরই দেখা মেলে না।

বর্তমানে তার ভিন্ন চিত্র যা প্রতিটি জেলা শহরের সাধারণ দৃশ্যের একটি। প্রতিবছর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। তবে আমাদের সমাজে শিশু শ্রম বন্ধ হয় না কখনোই। বরং তা পর্যায়ক্রমিক ভাবে বেড়েই চলেছে। সেই সাথে অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। বিভিন্ন কলকারখানা এবং গার্মেন্টসগুলোতে নামেমাত্র শিশু শ্রমবিরোধী সাইনবোর্ড দেখা গেলেও, তারাই অধিক লাভের আশায় শিশুদের এসব কাজে ব্যবহার করে। সমাজের উচ্চপদস্ত ব্যক্তিটি মিছিল, মিটিং এ শিশু শ্রমবিরোধী বক্তৃতার পর রাস্তায় পথশিশুকে দেখেন না। নিজের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়োজিত শিশুটির উপর অমানবিক নির্যাতন করেন দিনের পর দিন। বর্তমানে পুজি ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তি ব্যবসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানেও দেখা যায় শিশু শ্রমিকদের ঢল। অনেক শিশুদের লেখাপড়া করার ইচ্ছে থাকা সত্তেও পরিবারের চাপে নয়তো পরিবারহীন হওয়ায় মেনে নিতে হয় এই ভিক্ষাবৃত্তি নামক ব্যবসা। এসব শিশুর অসহায় চোখের দিকে তাকিয়েও কারও বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয় না। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা। যে দেশ লাখো মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছে আজ এত বছর কোথায় সেই স্বাধীন দেশ। যে দেশে ছোট ছোট শিশুরা নিজেদের অধিকার পায় না, জীবীকার তাকিদে ভিক্ষাবৃত্তি আর কঠোর শ্রমকে মেনে নিচ্ছে সে দেশ কিভাবে উন্নতির শেখরে পৌঁছবে। যেখানে সরকার সুষ্ঠুভাবে এর কোন প্রতিকার করতে পারছে না সেখানে সাধারন মানুষের সামান্য সহায়তায় কিছুই সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে। পথশিশু আর শ্রমজীবী শিশুরা এভাবেই অনাদরে অবহেলায় পড়ে রবে।  আর এভাবেই উপরমহলের বক্তব্যগুলো পুরোনো হতে থাকবে সেই সাথে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষাহীনতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেবে। আমাদের দেশে সফলভাবে শিশুদের জন্য কোন সুষ্ঠু  পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অবহেলিত শিশুরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত  হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে অনৈতিক কার্যকলাপে। নির্যাতনে জর্জরিত করা হচ্ছে একের পর এক শিশুকে। এরকম শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনার পর দেশময় তোলপাড় হয়ে যায় ঠিকই কিন্তুু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কারও ভূমিকা বিশেষ লক্ষ্যনীয় নয়। তাহলে নিজের দেশে শিশুর নিরাপত্তা কোথায়। শিশুরা সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে বড় হবে তেবেই তো তারা দেশ নেতৃত্ব দেবে। যেখানে তাদের বেঁচে থাকাই প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করা নেহায়েত কল্পনাতীত। দেশের বর্তমান পরিস্থতি বিবেচনায় সরকার সহ সকলের সজাগ দৃষ্টিই এসকল শিশুদের শূণ্য চোখে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফোটাতে পারে।

 

 

শিশুরাই জাতির  ভবিষ্যত

শিশুরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যত এবং একই সাথে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ । শিশুর প্রতি ব্যবহারে সর্তকতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।

বিশ্বশিশু পরিস্থিতিতে পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্ববাসীদের মধ্যে এক জায়গায় একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়, যা হচ্ছে শিশু অধিকার সর্ম্পকে পূর্বেকার যে কোনো সময়ের  চেয়ে আরো অনেক বেশি সচেতন।আজ বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী নানা আয়োজনে দিনটি পালন করে আসলেও সমাজে শিশুদের বড় একটি অংশ এখনও বঞ্চিত তাদের প্রাপ্য মৌলিক অধিকার থেকে। বেঁচে থাকার তাগিদে এ শিশুরা তাই বই-খাতার পরিবর্তে বেছে নিচ্ছে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার তাগিদ বিশ্লেষকদের। যদিও সরকার বলছে, শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য  হাতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প।

শিশু সুমন মিয়ার দিনের শুরুটা এমনই। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই লেগে পড়ো কাজে। টোকাই বা ভিক্ষা কিংবা আরো কোনো কাজ, পেটের দায়ে কি না করে তারা ।  নরসিংদী রেল-স্টেশনের ছিন্নমূল শিশুদের সবার জীবনের গল্পটা প্রায় একই ধরনের। প্রতিদিন হাজারও মানুষ ভাগ্য বদলের তাগিদে এক স্টেশন ছেড়ে অন্য স্টেশনে যায়। শুধু সুমনদের ভাগ্য যেন কখনোই বদল হয়না।

ইউনিসেফের জরিপে দেখা গেছে, দেশে ৫ থেকে ১৪ বছরের মোট শিশুর প্রায় ১৩ শতাংশই লেখা-পড়ার পরিবর্তে জড়িত বিভিন্ন পেশায়। এছাড়া ১৩ লাখ শিশু জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সুযোগে তাদের দিয়ে সমাজের একটি চক্র নানা ধরনের অপকর্ম করিয়ে নিচ্ছে। যদিও সরকার বলছে, পথশিশুদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বেসরকারি তথ্যমতে, দেশে এখন ১০ লাখেরও বেশি শিশু গৃহহীন। অভাবই যাদের নিত্যসঙ্গী

অশিক্ষার অন্ধকারে অসহায় ও দরিদ্র শিশুরা

শিক্ষার আলো সমানভাবে ছড়াচ্ছে না আমাদের দেশের দরিদ্র শিশুদের মাঝে। ফলে তারা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। তাই এই শিক্ষা তাদের জীবনে সোনা হয়ে ফলছে না। অকালেই তাদের জীবন ঝরে পড়ছে। কিন্তু এই সমস্যার কোন প্রতিকার হচ্ছে না।

বর্তমানে বিভিন্ন শিশু উন্নয়ন সংস্থা এই সব পথ শিশু ও হতদরিদ্র শিশুদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছে। কিন্তু এই সুবিধা পাচ্ছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন শিশু। কিন্তু বাকিরা সে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বগুড়া শহরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান স্থান ঘুরে কয়েকজন শিশুর সাথে সাক্ষাত করে জানা গেছে তারা কেন স্কুলে যেতে পারে না বা কেন যায় না।

বগুড়া রেল স্টেশনের জুয়েল (১২) সে স্টেশনে কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে। তার বাবা বিয়ে করে অন্যত্র থাকে। আর সে এই ডিম বিক্রি করে মায়ের সংসারে অর্থ যোগান দেয়। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। স্টেশনের আরেক শিশু হল জলিল। সে ট্রেনে ও প্লাটফর্মে চা বিস্কুট বিক্রি করে। তার বাবা নেই, পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে ২য়। তাই বড় ভাইয়ের মত তাকেই সংসারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে হয়।

এই রকম আর একটি শিশু নয়ন (১১)।  জজকোর্ট মোড়ের এক চায়ের দোকানে কাজ করে। সে দিনে ২০/৩০ টাকা আয় করে। সে স্কুলে যায় না। তার বাবা ও মা দু’জনেই কাজ করে । তার ছোট এক বোন আছে। কিন্তু তারপরও তার মা বাবার অসচেতনতার জন্য সে স্কুলে যায় না।আরেক শিশু মলি,যে একজন  ফুল বিক্রেতা।তার বাড়ি হাডিপট্টিরএক বস্তিতে। তার মা নেই বাবা আছে। কিন্তু সে প্রতিবন্ধী। তাই কোন কাজ করতে পারে না। এই রকম শাওন, ঝর্না, রহিমাসহ আরও অনেক শিশু তাদের স্কুলে না যাওয়ার নানা সমস্যার কথা জানায়। তার মধ্যে বেশি যে সমস্যা দু’টো গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হল পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও মালিক শ্রেণীর শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি অনীহা। তাদেরকে কেউ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করছে না। ফলে তারা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না। এছাড়া এই সব শিশুদেরকে কেউ পড়ালেখার কথা বলে না বলেও তারা জানায়। তাই এই সব শিশুদের নিরর হয়ে বেড়ে ওঠার দোষ তাদের নয়।

এই দোষ দেশ ও সমাজের। তাদের মালিক ও পরিবারের এবং আমাদের শিথিল সমাজের। আমরা কি পারিনা এসব অসহায়,দরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দিতে???

জাওয়াদুল করিম জীসানসভাপতি,এনসিটিএফ, বগুড়া।

সমাজ ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন

বাংলাদেশে এক দশমাংশ জনগণ (২৪ বছর আগের জরিপ মতে যা প্রায় দেড় কোটি, এরপর সরকারী ভাবে আর কোন জরিপ হয়নি) বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজব্যবস্থা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩২% দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, ২৮% শারীরিক প্রতিবন্ধি, ২২% বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি, ৭% বুদ্ধি প্রতিবন্ধি আর বাকী ১১% বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার । এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তাদের নাগরিক অধিকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বত্র প্রবেশের সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় জরিপ মতে শতকরা মাত্র ৪ জন শিশু প্রতিবন্ধি স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বজনীন প্রাথমিক  শিক্ষায় প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের কথা বলা হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই তেমন কোন তথ্য বা সচেতনতা। নেই শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রয়োজনীয় মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা। উল্লেখ্য যে, দৃষ্টি, বাক্ ও শ্রবণ এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শিশুদের  জন্যে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প সংখ্যাক কিছু বিশেষ স্কুল থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধি শিশুরা না পারে বিশেষ স্কুলে যেতে না পায় স্বাভাবিক স্কুলে যাওয়ার যথাযথ পরিবেশ। কারণ স্বাভাবিক স্কুলে শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্যে যে ঢালু পথ বা র‌্যম্প থাকার কথা তা কিছু সংখ্যাক সরকারি স্কুল এবং দু’একটি বেসরকারি স্কুলে ছাড়া কোথাও নেই।

আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটি  ধারনা বদ্ধমূল প্রতিবন্ধি শিশুরা বিশেষ স্কুল ছাড়া স্বাভাভিক স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পড়তে পারবে না। প্রতিবন্ধি শিশুরাও যে শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে প্রমান করতে কিংবা আমাদের সমাজকে কিছু দিতে পারে এ কথা অধিকাংশ পরিবারই এবং আমাদের তথাকথিত ভদ্র সমাজ ও শিক্ষকগণ বিশ্বাস করতে চান না।  এমনতরো বিভিন্ন দিক থেকে বাধাগ্রস্থ হয়ে অভিভাবকগণ ভাবতে শুরু করেন প্রতিবন্ধি শিশুটিকে ঘরেই শিক্ষা দেই কিংবা শিক্ষিত হয়ে সে করবে টাই বা কি! কে কি বলবে বা কে কি ভাববে এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অভিভাবকগণ প্রতিবন্ধি শিশু বা ব্যক্তিটি কে আবদ্ধ করে ফেলেন চার দেয়ালের ভেতর।তাদের সবকিছুতেই হয়ে যায় ‘না’।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় -“না”। জন্মদিন বা বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান –“না”।বিয়ে বাড়ী –“না”। পাবলিক বাস বা ট্রেন –“না”। বিনোদন কেন্দ্র বা খেলার মাঠ তাতেও –“না”। আমাদের তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থায় এই “না” এর আবর্তে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধি শিশুরা। যারা প্রতিবন্ধিদের মানুষ বলে মনে করেন না কিংবা তাদের দেখে হাসাহাসি বা বিরূপ মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করেন না আমি তাদের কথা বলছি।বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই কেনো এমন করে ভাবতে পারেন না- তাদের ঘরেও একজন প্রতিবন্ধি শিশু থাকতে পারতো! করুণা নয় একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলে প্রতিবন্ধি শিশুরাও পারবে রাষ্ট্রের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে। এর জন্যে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। আমাদের শক্তিশালী গণমাধ্যম এবং সুশীলসমাজ এতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে। সমাজ তাদেরকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। সুশীল সমাজের নৈতিক দায়িত্ব প্রতিবন্ধি শিশুদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার কে “না” না বলে “হাঁ” বলতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা। তাহলেই তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরী হবে এবং তারা নিজেদের এই সমাজের বোঝা ভাববে না। এতেই প্রমাণ হয় প্রতিবন্ধি কল্যাণ আইন ২০০১ এ তাদের সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও তা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে।

পাল্টে কি দেওয়া যায় না বিশৃংখলিত এই সমাজ ব্যবস্থাকে? জাগিয়ে কি তোলা যায় না ঘুমন্ত এই মানুষগুলোকে? আমূলে বদলে কি দেওয়া যায় না মানুষের এই চিন্তাধারাকে? আর কত পিছিয়ে থাকবে প্রতিবন্ধি শিশুরা?

জাওয়াদুল করিম জীসান,  সভাপতিএনসিটিএফ, বগুড়া।

নীরবে চাপা পড়ছে আরো একটি স্বপ্ন

তনিমা রব তোড়া : ইয়াসিন নামের ছেলেটি। বয়স ১৩ কি ১৪। তাকে প্রতিদিন পাড়ার সামনের  মুদির দোকানটিতে দেখা যায়। ইয়াসিন মুদির দোকানে কাজ করে।  সাধারণত এই বয়সের  শ্রমজীবী শিশুরা যেমন চঞ্চল আর দুষ্ট প্রকৃতির হয় ইয়াসিন মোটেই তাদের দলের নয়। শান্ত আর ভদ্র সে ছেলেটি বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে হাজারও কষ্ট। সারাদিন দোকানে থাকে আর দোকানের সব কাজ করে। স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে  জানতে চাইলে সে বলে, – ” আগে স্কুলে যাইতাম। এখন আর যাইতে পারি না। সারাদিন দোকানেই থাকন লাগে, ইচ্ছা আছিল পড়ালেখা করমু কিন্তুু বাবায় এইহানে পাঠায় দিসে ”। বেতনের কথা জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, যে টাকা বেতন পায় সেটা বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় আর এখানে থাকা খাওয়া সব মালিকে দেয়। দোকানে কাজ করে পড়াশুনা করা অসম্ভব তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে  আগেই। ইয়াসিনের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে চাকুরী করবে। কিন্তু দারিদ্রতার  কাছে হার মেনে চাপা পড়ে যাচ্ছে আরও  একটি স্বপ্ন

শূন্য চোখের স্বপ্ন

তনিমা রব তোড়া :

আজকের যুগে শিশুদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যপক আয়োজনে মিছিল মিটিং হলেও প্রকৃতপক্ষে শিশুদের পাশে দাড়ানোর মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ এ প্রবাদ বাক্যটি বর্তমান সময়ে প্রত্যেক মিছিল, মিটিং এর মূল কথা। তবে তা মুখের কথাই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ, প্রচার বা প্রসার কোনটিরই দেখা মেলে না। বর্তমানে তার ভিন্ন চিত্র যা প্রতিটি জেলা শহরের সাধারণ দৃশ্যের একটি। প্রতিবছর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। তবে আমাদের সমাজে শিশু শ্রম বন্ধ হয় না কখনোই। বরং তা পর্যায়ক্রমিক ভাবে বেড়েই চলেছে। সেই সাথে অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

বিভিন্ন কলকারখানা এবং গার্মেন্টসগুলোতে নামেমাত্র শিশু শ্রমবিরোধী সাইনবোর্ড দেখা গেলেও, তারাই অধিক লাভের আশায় শিশুদের এসব কাজে ব্যবহার করে। সমাজের উচ্চপদস্ত ব্যক্তিটি মিছিল, মিটিং এ শিশু শ্রমবিরোধী বক্তৃতার পর রাস্তায় পথশিশুকে দেখেন না। নিজের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়োজিত শিশুটির উপর অমানবিক নির্যাতন করেন দিনের পর দিন। বর্তমানে পুজি ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তি ব্যবসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানেও দেখা যায় শিশু শ্রমিকদের ঢল। অনেক শিশুদের লেখাপড়া করার ইচ্ছে থাকা সত্তেও পরিবারের চাপে নয়তো পরিবারহীন হওয়ায় মেনে নিতে হয় এই ভিক্ষাবৃত্তি নামক ব্যবসা। এসব শিশুর অসহায় চোখের দিকে তাকিয়েও কারও বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয় না। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা। যে দেশ লাখো মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছে আজ এত বছর কোথায় সেই স্বাধীন দেশ। যে দেশে ছোট ছোট শিশুরা নিজেদের অধিকার পায় না, জীবীকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি আরো কঠোর শ্রমকে মেনে নিচ্ছে সে দেশ কিভাবে উন্নতির শেখরে পৌঁছবে। যেখানে সরকার সুষ্ঠুভাবে এর কোন প্রতিকার করতে পারছে না সেখানে সাধারন মানুষের সামান্য সহায়তায় কিছুই সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে। পথশিশু আর শ্রমজীবী শিশুরা এভাবেই অনাদরে অবহেলায় পড়ে রবে। আর এভাবেই উপরমহলের বক্তব্যগুলো পুরোনো হতে থাকবে সেই সাথে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষাহীনতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেবে। আমাদের দেশে সফলভাবে শিশুদের জন্য কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অবহেলিত শিশুরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে অনৈতিক কার্যকলাপে। নির্যাতনে জর্জরিত করা হচ্ছে একের পর এক শিশুকে। এরকম শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনার পর দেশময় তোলপাড় হয়ে যায় ঠিকই কিন্তুু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কারও ভূমিকা বিশেষ লক্ষ্যনীয় নয়। তাহলে নিজের দেশে শিশুর নিরাপত্তা কোথায় ?

শিশুরা সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে বড় হবে তেবেই তো তারা দেশ নেতৃত্ব দেবে। যেখানে তাদের বেঁচে থাকাই প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করা নেহায়েত কল্পনাতীত। দেশের বর্তমান পরিস্থতি বিবেচনায় সরকার সহ সকলের সজাগ দৃষ্টিই এসকল শিশুদের শূণ্য চোখে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফোটাতে পারে । আর তা না হলে স্বপ্নগুলো শূন্য চোখেই রয়ে যাবে.